রোদের তাপ ক্ষীন হয়েছে। প্রকৃতির বুকে শীতের রূপ। মাঠে পেকেছে আমন ধান। চলছে কাটা-মাড়াই। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে কৃষাণ-কৃষাণীর মন আর বসত বাড়ী মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে। ধান কাটা আর মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে চাষীরা। সেই সাথে গ্রাম বাংলায় চলছে নবান্নের উৎসব। কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আমন ধানের ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। ফসলের মাঠে এখন কৃষকের হাসি। পাকা আমন ধানে ভরে গেছে মাঠ। যতদূর চোখ যায় ততদূর মাঠে মাঠে হাওয়ায় দোলা খাচ্ছে সোনালী ধানের শীষ। ফসলি জমিতে কৃষকের মন আবেগে আপ্লুত।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে চলতি মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশী জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। চলছে ধান কাটার কাজ। কাটা, আঠি বাধা, নিয়ে আসা, মাড়াই করা, পরিস্কার ও শুকানোয় ব্যস্ত পুরো চাষী পরিবার। উপজেলার চাপড়া, যদুবয়রা, পান্টি, চাঁদপুর ও বাগুলাট ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়-কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছে। কৃষক ও কৃষাণীর দম ফেলার সময় নেই।

এবছর আমন ধানে প্রথম দিকে পোকার আক্রমণে অসহায় হয়ে পড়েছিল চাষিরা। বৃষ্টি চলে যাওয়ায় অতিরিক্ত তাপ ও গরমে ধানে মাজরা, পাতা মোড়ানো, কারেন্ট, গান্ধিসহ নানা ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। অবশেষে কৃষকরা বারবার কীটনাশক ছিটিয়ে পোকা দমন করতে সক্ষম হয়।

এদিকে বাজারে নুতন ধান উঠতে শুরু করেছে। প্রতি মণ ধান পাইকারী ১১‘শত টাকা থেকে ১২শত ৫০শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক বছর পর ফলন ও দাম ভালো পেয়ে চাষীরা বেশ খুশি। এবার ধানে চিটার পরিমান খুবই কম বলে জানায় তারা।

উপজেলার গোপালপুর গ্রামের মওসুমী চাষী শেখ শাজাহান আলী জানান, এ বছর চাষীরা তাদের জমিতে ধানী গোল্ড-৪৯, ব্রী-৩৩ ও ব্রী-১৭ জাতের আমন আবাদ করেছেন। গাছ সবুজ হওয়ার পরপরই মাজরা পোকা আক্রমণ করেছিল। তিনি জানান, উৎপাদন খরচ এবার বাড়লেও ভালো ফলনে সবাই লাভের মুখ দেখছে।

জোতমোড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল হান্নান মোল্লা সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আমনের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ইজারা, চাষ, চারা রোপণ ও পরিচর্যায় শ্রমিক খরচও বেড়েছে। সব মিলে প্রতি বিঘায় আমন আবাদে খরচ হয়েছে ১৮ থেকে ২২ হাজার টাকা, যা গতবারের ৩/৪ হাজার টাকা বেশি। এ বছর বিঘা প্রতি ১৬ থেকে ২০ মণ ফলন হয়েছে বলে তিনি জানান।

এদিকে গরু পালনের জন্য খড় ও বিছালীর কদরও বেড়েছে। এক বিঘা ধানের জমিতে ১৮-২০০০ আটি বিছালী হচ্ছে, যার বাজার মূল্য বর্তমানে কমপক্সে ৫/৬ হাজার টাকা। বিছালীতেও খুশী সবাই।

কুমারখালী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১৪ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৫ হেক্টর বেশি। জমির ইজারা, বীজ, সার, চাষ ও পরিচর্চা বাবদ প্রতি বিঘায় খরচ লেগেছে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ১৫ থেকে ২০ মণ ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।

এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাইসুল ইসলাম বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে আমনে মাজরাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছিল। ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়ার ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়নি। তিনি বলেন, এবার আমনের ফলন ভালো হওয়ায় চাষী আনন্দিত। আমরা নিয়মিত চাষীদের পরামর্শ দিয়েছি। আমাদেও পরামর্শ চাষীরা গ্রহন করায় উপকৃত হয়েছে।