গাজীপুরসহ সারাদেশে সকাল দশটা উনচল্লিশ মিনিটে অনুভূত কয়েক সেকেন্ডের শক্তিশালী ভূমিকম্পে মুহূর্তেই সৃষ্টি হয় ব্যাপক আতঙ্ক। উঁচু ভবন দুলতে শুরু করলে ঘরবাড়ি, অফিস, শিল্পকারখানা, দোকানপাট থেকে মানুষ দ্রুত খোলা জায়গায় ছুটে আসে। অনেকেই আশঙ্কা করেন আরও বড় কম্পন আসতে পারে—তাই রাস্তাঘাট, মাঠ, স্কুলের সামনে কিংবা মহাসড়কের পাশে নিরাপদ জায়গায় দাঁড়িয়ে পরিস্থিতি পর্যেবক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল গাজীপুরের পার্শ্ববর্তী নরসিংদীর মাধবদী এলাকা। কেন্দ্র কাছাকাছি হওয়ায় গাজীপুরে দুলুনি ছিল বেশ জোরালো, যা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়িয়ে দেয়।
মেট্রোপলিটন এলাকা, টঙ্গী, কালিয়াকৈর, শ্রীপুর, কালীগঞ্জ ও কাপাসিয়াজুড়ে হঠাৎ মোবাইল নেটওয়ার্কে চাপ বৃদ্ধি পায়। কলড্রপ ও নেটওয়ার্ক অস্থিরতার পাশাপাশি কোনাবাড়ী, বোর্ডবাজার, চান্দনা চৌরাস্তা, কড্ডা ও সালনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। ট্রান্সমিশন লাইনে অস্থিরতা দেখা দিলে সাধারণ মানুষ আরও উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠেন।
হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিল্পকারখানায়ও সাময়িক আতঙ্ক দেখা দেয়। তবে দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়নি। অনেক প্রতিষ্ঠান নিরাপত্তার স্বার্থে কিছু সময়ের জন্য কার্যক্রম স্থগিত রাখে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভূমিকম্পের ভিডিও ও লাইভে মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে।
শিল্পনগরী গাজীপুরে প্রভাব ছিল আরও তীব্র। বহু কারখানায় দুলুনি অনুভূত হতেই শ্রমিকরা আতঙ্কে নিচে নেমে আসে। সাইরেন বাজিয়ে শ্রমিকদের নিরাপদ জায়গায় দাঁড় করানো হয়। এতে সড়কে ভিড় বেড়ে যানজট সৃষ্টি হয়।
ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি কতটা হয়েছে তা এখনও নিশ্চিত নয়। প্রকৌশলীরা বিভিন্ন ভবনে ফাটল, বিম–কলামের অবস্থা ও কাঠামোগত স্থিতিশীলতা পর্যেবক্ষণ করছেন। নাগরিকদের উদ্বেগ বাড়ছে—দুর্যোগ পূর্ব প্রস্তুতি, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিতকরণ ও উদ্ধার সক্ষমতা জোরদারের দাবি উঠছে।
ফায়ার সার্ভিসের গাজীপুর উপসহকারী পরিচালক, মোঃ মামুন হোসেন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি। দু–একটি ভবন কাত হয়ে গেছে এমন খবর পাওয়া গেলেও যাচাই চলছে। আমাদের টিম মাঠে রয়েছে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরোপুরি প্রস্তুত।
গাজীপুরের নবাগত জেলা প্রশাসক, মোহাম্মদ আলম হোসেন বলেন, গাজীপুরে বড় ধরনের কোনো ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাওয়া যায়নি। কিছু শ্রমিক হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে আহত হয়েছে—এই খবর আমরা যাচাই করছি। আমাদের টিম বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে পরিস্থিতি পর্যেবক্ষণ করছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি দ্রুতই স্বাভাবিক করা হবে এবং প্রয়োজনীয় সব সহায়তা প্রদান করা হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের নবাগত পুলিশ কমিশনার, মোঃ ইসরাইল হাওলাদার বলেন, গাজীপুরে এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আমরা বিভিন্ন এলাকায় টহল জোরদার করেছি এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কমাতে আমরা সক্রিয়ভাবে মাঠে রয়েছি। পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।
গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ ছায়াবিথি জোনের ডিজিএম, মোঃ জিয়াউল হক জানান,ভূমিকম্পে বেশ কিছু বিদ্যুতের খুঁটি হেলে পড়েছে। চৌরাস্তা গ্রিডের ১৩২ কেভি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সব ৩৩ কেভি লাইন বন্ধ রয়েছে। ঘোড়াশাল গ্রিডেও সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় পুরো এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আমাদের টিম মাঠে কাজ করছে—পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই মোট ক্ষয়ক্ষতি পরিষ্কার হবে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (অপরাধ–উত্তর), রবিউল হাসান বলেন, আল্লাহর রহমতে বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ক্ষয়ক্ষতির কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা সবসময় নাগরিকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছি।