এম এ কাইয়ুম চৌধুরী, শিবালয় (মানিকগঞ্জ) : মানিকগঞ্জে হাজারো ঐতিহ্য বুকে ধরে এখনও কালের সাক্ষী হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক বালিয়াটি জমিদার বাড়ি। মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে আনুমানিক ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি গ্রামে অবস্থিত এই জমিদার বাড়িটি। বাড়িটিতে মোট সাতটি স্থাপনা রয়েছে। তবে সবগুলো ভবন একসাথে স্থাপিত হয়নি। প্রাসাদের অন্তগর্ত বিভিন্ন ভবন জমিদার পরিবারের বিভিন্ন উত্তরাধিকার কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে স্থাপিত হয়েছিলো। বর্তমানে কেন্দ্রীয় ব্লকটি যাদুঘর হিসেবে রয়েছে। এই প্রাসাদটি বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত ও পরিচালিত।

জানা যায়, একটি নিম্নবিত্ত সাহা পরিবার থেকেই পরবর্তীতে বালিয়াটি জমিদার বংশের উদ্ভব হয়েছিলো। যা এখন দর্শনীয় স্থান হিসেবে বেশি পরিচিত। প্রতিদিন শত শত মানুষের ঢল নামে এই জমিদার বাড়িতে। দূর-দূরান্ত থেকে দর্শনার্থীরা এখানে আসে এবং বিভিন্ন নাটক, সিনেমার শুটিংজমিদার বাড়ির সিংহ দরজায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে প্রশস্ত আঙিনা। তার পরেই একই লাইনে দাঁড়িয়ে আছে চারটি বহুতল ভবন। সেগুলোতে আবার খোদাই করা দৃষ্ঠিনন্দন অলংকরণের দেওয়াল। এগুলোর পেছনে জমিদার অন্দরমহল এবং রয়েছে শান বাাঁধানো পুকুর। জমিদার বাড়ির ভেতরে রং মহল নামে খ্যাত ভবনে বর্তমানে জাদুঘর স্থাপন করা হয়েছে। পুরো জমিদার বাড়ির চত্বরটি উঁচু প্রাচীরে ঘেরা। জমিদার বাড়িটিতে ২০৯টি কক্ষের প্রতিটি কক্ষেই রয়েছে প্রাচীন শিল্পের সুনিপুণ কারুকাজ। আঙিনায় রয়েছে ফুলের বাগান। পেছনের অন্দর মহলে বিশালাকার পুকুর। পুকুরের চারপাশে রয়েছে সাতটি শান বাঁধানো নান্দনিক ঘাট। বাড়ির প্রতিটি দেয়াল ২০ ইঞ্চি পুরু। গাঁথুনিতে সিমেন্টের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে চুন-সুরকি আর শক্তিশালী কাদামাটি। লোহার রডের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার পাত। ভেতরে রয়েছে লোহার সিঁড়ি।

এ বাড়ির প্রথম জমিদার পুরুষ গোবিন্দ লাল সাহা। তিনি দুটি বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের সম্পত্তির দশ আনা অংশ এবং দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর সন্তানদের দান করেন ছয় আনা অংশ। দশ আনার জমিদার বাড়িটিই বর্তমানে পর্যটকদের দর্শনীয় স্থান। এখানে পশ্চিম থেকে পূর্ব পর্যন্ত চারটি সুবৃহৎ অট্টালিকা বিদ্যমান। এগুলো বড় তরফ, মেঝো তরফ, নয়া তরফ এবং ছোট তরফ নামে পরিচিত। তবে ছয় আনার জমিদার বাড়ির অস্তিত্ব বর্তমানে নেই।

বালিয়াটি জমিদার বাড়িটি রোববার পূর্ণদিবস ও সোমবার অর্ধদিবসস এবং সরকারি বিশেষ ছুটির দিন বন্ধ থাকে। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে ১০টা থেকে ৬টা পর্যন্ত ও শীতকালীন ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্রতিদিন খোলা থাকে।

প্রত্নতাত্ত্বিক সূত্রমতে, ১৮৮৫ সালে জমিদার গোবিন্দ লাল সাহা এ বাড়ি তৈরি করেন। ৫ দশমিক ৮৮ একর জমির ওপর সাতটি বিশাল ভবনে রয়েছে ২০৯টি কক্ষ। ১৯৮৭ সালে গেজেটের মাধ্যমে বড়িটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পরে ২০০৮ সালে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয় প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগের কাছে। বর্তমানে এটি ওই বিভাগের আওতায় সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত। সামনের চারটি ভবনের মধ্যে পশ্চিম দিকে থেকে দ্বিতয় ভবনের দোতলা জদুঘর হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এখানে বিভিন্ন প্রচীন নিদর্শন প্রদর্শন করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে টিকিটের বিনিময়ে দর্শনাথীদের জন্য বাড়িটি খুলে দেওয়া হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে দর্শনাথীদের সুবিধার জন্য হাঁটাপথ ও টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এক কোট ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আরো সংস্কার কাজ হয়। এর মধ্যে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় হয় পুকুরের পাড় বাঁধাই ও সৌন্দর্যবর্ধনে। বাকি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় হয় ভবন সংস্কারে। ২০১৭ সালে আবারো ৮৫ লাখ টাকা ব্যয় করে বাড়িটির কাজ করা হয়।