কার্যকরিতা হারাচ্ছে অ্যান্টিবায়োটিক। হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে এখন ৪১ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করছে না। অ্যান্টিবায়োটিকের অযৌক্তিক ও অতিরিক্ত ব্যবহার দিন দিন এই সংকটকে গভীর করছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর গতকাল সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে এক অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। আইইডিসিআর মিলনায়তনে অনুষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে এই পর্যবেক্ষণমূলক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা অধ্যাপক জাকির হোসেন।

অ্যান্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ে সতর্ক করে অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ও অতিরিক্ত ব্যবহার অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সকে (এএমআর) বিপজ্জনক পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। এটি এখন দেশের জন্য বড় জনস্বাস্থ্যঝুঁকি। সবার প্রতি দায়িত্বশীলতার সঙ্গে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার কমিয়ে নিজের জীবন রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা সম্পর্কে জানাবোঝার জন্য আইইডিসিআর ২০২৪ সালের জুলাই থেকে গত জুন পর্যন্ত ৯৬ হাজার ৪৭৭ জন রোগীর নমুনা পরীক্ষা করে। দেশের পাঁচটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের শরীরে ৭১ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। আইসিইউতে ভর্তি রোগীদের চিকিৎসায় ৫টি জীবাণুর ক্ষেত্রে ৭১টি অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ৫টি অ্যান্টিবায়োটিকের সংবেদনশীলতা ৮০ শতাংশের ওপরে। একটির সংবেদনশীলতা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশের মধ্যে। বাকিগুলোর সংবিদনশীলতা ৬০ শতাংশের নিচে।

আইইডিসিআর এ সময়ে যত রোগীর নমুনা পরীক্ষা করেছে, তার মধ্যে ৭ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক–প্রতিরোধী অণুজীব প্যান–ড্রাগ–রেজিট্যান্স (পিডিআর) পাওয়া গেছে। প্যান ড্রাগ হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট রোগের জন্য ব্যবহৃত সব ধরনের ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক। আইসিইউ রোগীদের ক্ষেত্রে পিডিআর–এর উপস্থিতি ৪১ শতাংশ। অর্থাৎ আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রোগীদের ৪১ শতাংশের ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ কাজ করছে না। আইইডিসিআর জানায়, তারা ২০১৬ সাল থেকে বাংলাদেশে এই ‘জাতীয় অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স (এএমআর) সার্ভিলেন্স’ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। এর মূল লক্ষ্য হলো, বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচিত অণুজীব বা প্যাথোজেনগুলোর মধ্যে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্সের (এএমআর) অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি শক্তিশালী নজরদারিব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।

আইইডিসিআর তাদের পর্যবেক্ষণে ১২৩টি ‘ড্রাগ-বাগ কম্বিনেশন’ (অণুজীব ও ওষুধের পারস্পরিক সম্পর্ক) বিশ্লেষণ করেছে। কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য পূর্ববর্তী বছরের প্রতিবেদনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টি ক্ষেত্রে কার্যকরিতা বেড়েছে, ৭৯টি ক্ষেত্রে কমেছে এবং ৬টির ক্ষেত্রে অপরিবর্তিত রয়েছে।