অন্তবর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ নতুন অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন খুলনার বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যবসায়ী, ছাত্রসহ বিশিষ্টজনরা। সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা অন্তবর্তীকালীন সরকারের এটা প্রথম বাজেট।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এডভোকেট শফিকুল আলম মনা বলেন, একটি নির্বাচিত সরকার তার বাৎসরিক আয়-ব্যয় হিসাব করে বাজেট প্রদান করে। এরা তো নির্বাচিত সরকার নয়, এরা বাজেট দিয়ে পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে পারবে না। এই বাজেটের সুফল জনগণ পাবে এটা আশা করা ভুল হবে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য খুলনা মহানগরী সেক্রেটারি এডভোকেট শেখ জাহাঙ্গীর হুসাইন হেলাল বলেন, এ সরকারের প্রথম বাজেট এটা। এ বাজেটে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার জন্য অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় ভালো হবে। এই বাজেট সুন্দরভাবে কার্যকর হওয়ার জন্য এবং জনগণের জন্য উপযোগী হওয়ার জন্য দুর্নীতিমুক্ত ব্যবস্থা থাকা দরকার। সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত হওয়ার ওপর নির্ভর করে এই বাজেট কতটা কার্যকর হবে।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বলেন, বাজেট অনেকটাই গতানুগতিক, তবে আগের তুলনায় কম উচ্চাভিলাষী। যেহেতু এডিপি কম ধরে বাজেট সেহেতু আকার ছোট হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির নামে অর্থের অপচয় কম হবে ধরে নিচ্ছি সে কারণেও বাজেট কিছুটা রক্ষণশীল। অর্থ সংগ্রহে প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকার আশা করি সফল হবেন, কিন্তু বাজেট বাস্তবায়নের গতি রাজনৈতিক সরকারের তুলনায় কম হবে বলে মনে করি।
খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব এডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, এবারের বাজেটটা অনেকটাই বিগত দিনের পুনরাবৃত্তি। এই বাজেট ঘাড়তি বাজেট হবে। এই বাজেট প্রত্যক্ষ করের চেয়ে পরোক্ষ করের প্রতি ঝোঁক বেশি দেখা যাচ্ছে। এটা বড় লোকদের পক্ষ অবলম্বন করা হলো। এতে মুদ্রাস্ফীতি করবে। ভোগান্তিতে পড়বে সাধারণ মানুষ। এই বাজেট সুষম বাজেট।
বাংলাদেশ উইমেন্স চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির বিভাগীয় প্রধান শামীমা সুলতানা শীলু বলেন, অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবিত বাজেটকে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে উদ্যোক্তাদের জন্য আরও কিছু সুযোগ সুবিধা রাখলে ভালো হতো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের খুলনার উপদেষ্টা মিনহাজুল আবেদীন সম্পদ বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ‘তারুণ্যের উৎসব’ উদযাপনের জন্য একশ’ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তরুণ-যুবাদের দেশের উন্নয়নে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত করার জন্য এই বরাদ্দ দেওয়ায় অর্থ উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। বাজেটে জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন ও সহায়তার জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যা সত্যিই প্রশংসনীয়।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট রাজস্ব আয়ের সাথে সম্পর্ক নাই। ব্যাংক থেকে সরকার যদি লোন নেয়, তখন প্রাইভেট সেক্টরে বিনিয়োগ হয় না। রাজস্ব আয়ের পুরোটাই পরিচালনা ব্যয়ে চলে যাবে। রাজস্ব আয়ের উপর ভিত্তি করে বাজেট করা উচিত। বাজেটে মৌলিক জায়গায় দূরত্ব রয়েছে। গুণগত দিক থেকে কোনো পরিবর্তন নাই। কাঠামোগত আগের টাই রয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি।
বাজেট প্রতিক্রিয়ায় প্রদত্ত বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উল্লেখ করেছেন, অন্তবতীকালীন সরকারের জন্য এই বাজেট বাস্তবায়ন কঠিন হবে। আগের বাজেট যেভাবে চলে আসছে, সেখান থেকে সংখ্যার তারতম্য হয়েছে। কিন্তু বাজেটের পিন্সিপাল একই রয়ে গেছে। বিগত সরকারের ধারাবাহিকতা থেকে অন্তবর্তীকালীন সরকার বের হতে পারেনি।