হোসেনপুর (কিশোরগঞ্জ) সংবাদদাতা : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সম্ভাবনায় কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুরে আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মাঠে নেমেছেন। ১৬২ কিশোরগঞ্জ এক সংসদীয় আসনে নির্বাচনীয় হাওয়া বইছে। নির্বাচন নিয়ে চলছে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা। সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় গণসংযোগের পাশাপাশি নিয়মিত ঢাকায় কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সেই সঙ্গে দলের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের কাছে টানার চেষ্টা করছেন। ভোটাধিকার থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত এ এলাকার মানুষ এখন অপেক্ষায় রয়েছেন কবে ব্যালট পেপারে সিল মেরে নিজের ভোটাধিকার ফিরে পাবেন।
কিশোরগঞ্জ সদর-হোসেনপুর আসনে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি মারা যাওয়ার পর তার বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি হয়েছিলেন। ফ্যাসিবাদ সরকারের পতনের পর তিনি পলাতক রয়েছেন। জেলা আওয়ামী লীগ অফিসটিও ছাত্র-জনতা ভেঙে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মী-সমর্থকদের এলাকায় দেখা যায়নি।
১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার সাতটি আসনের মধ্যে বিএনপি প্রার্থীরা পাঁচটিতে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন ও আওয়ামী লীগ পায় দুটি। পরে ১৯৯৬-এর নির্বাচনে দুটি এবং ২০০১ সালে দুটি আসনে জয় লাভ করে বিএনপি।
কিশোরগঞ্জ সদর-হোসেনপুর আসনে গণসংযোগ, মতবিনিময় ও সাংগঠনিক নানা কর্মকা-ে দেখা মিলছে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রাপ্ত সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. রেজাউল করিম খান চুন্নু।
সদর উপজেলা বিএনপি সভাপতি খালেদ সাইফুল্লাহ (ভিপি সোহেল), জেলা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল হোসাইন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শরীফুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ ঈ ম ওয়ালী উল্লাহ রাব্বানী, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাবেক এমপি মাসুদ হিলালী, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজি ইসরাইল মিয়া, সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ আবু তাহের মিয়া, ব্যারিস্টার আতিকুর রহমান ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট, যুগ্ম সম্পাদক মো. ওমর ফারুক। এ ছাড়াও এই আসনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের ছোট ভাই ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক কমিশনার ও বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মির্জা খোকন নির্বাচন করতে পারেন বলে তার সমর্থকরা জানিয়েছেন।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর তিনি হোসেনপুরের বিভিন্ন এলাকায় দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বলে জানা গেছে।
নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে বিএনপি প্রার্থীরা নিজের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ।
জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন কিশোরগঞ্জ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক জেলা নায়েবে আমির ও বর্তমান জেলা কমিটির সদস্য অধ্যাপক মোসাদ্দেক ভূঁইয়া। নিয়মিত গণসংযোগ করছেন তিনি। এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের কোনো আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী জয় লাভ করতে পারেনি। তবে এবার তারা মাঠে নেমেছে আটঘাট বেঁধে।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে প্রার্থী হতে চাচ্ছেন প্রফেসর আজিজুর রহমান জার্মানি ।
এ আসনে গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ। খেলাফত মজলিসের প্রার্থী শায়খুল হাদিস মাওলানা হিফজুর রহমান খান। সিপিবির প্রার্থী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন অ্যাডভোকেট মো. এনামুল হক।
সিপিবির সভাপতি ও বাম জোটের সমন্বয়ক আব্দুর রহমান রুমী বলেন, যখনই নির্বাচন হবে আমরা অংশগ্রহণ করব, তবে নির্বাচন সুষ্ঠু হতে হবে। সবগুলোতেই আমাদের সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছে। তবে নির্বাচনের সময় বাম জোটের সঙ্গে আসনের সমঝোতার সম্ভাবনা আছে।
জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির অধ্যাপক মো. রমজান আলী বলেন, ছয়টি আসনেই আমাদের একক প্রার্থী নিজ নিজ এলাকায় কাজ করছেন, চষে বেড়াচ্ছেন মাঠঘাট। প্রতিটি এলাকায় সাড়া পড়েছে। আমরা আশাবাদী ফলাফল ভালো হবে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য প্রার্থীই মনোনয়ন পাবেন। নির্বাচন যখনই হয় আমরা প্রস্তুত আছি। সবগুলো আসনের ফলাফল ভালো হবে বলে আশা করছি।
এ আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১৫ হাজার ৫১১। তাদের মধ্যে দুই লাখ ৬১ হাজার ৪১৩ জন পুরুষ, ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯৬ জন নারী এবং দুজন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন।
কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নের তুষার আহেম্মদ বলেন , আমরা ‘দীর্ঘদিন ধরে নিজেদেন ভোট দিতে পারছি না, এবার আমরা ভোট দিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বেচে নিয়ে জয়ের মালা পরাতে চাই।