গাজীপুরের ব্যবসায়ী মোঃ শাহজালাল প্রতারণার শিকার হয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে। বিশ্বাস করে বিনিয়োগ করা প্রতিষ্ঠানের দখল হারিয়ে এখন তিনি ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়। একের পর এক হয়রানিমূলক মামলা, দখলদারিত্ব এবং প্রতারণার শিকার হয়ে শাহজালাল এখন পরিবারের সঙ্গে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। শনিবার (১৫ মার্চ) গাজীপুর প্রেসক্লাবে এক সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শাহজালাল জানান, জাকারিয়া আলম ওরফে মামুনের কাছ থেকে উত্তরা দলিপাড়ায় সেভেন ডেইজ নামক একটি বেকারি ভাড়া নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন। ৪ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে ৫ বছরের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। মাসিক ৭০ হাজার টাকা ভাড়ার শর্তে তিনি প্রায় ২৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে ব্যবসা এগিয়ে নেন। কিন্তু হঠাৎ করেই জমির মালিক জায়গাটি বিক্রি করে দিলে তিনি নতুন ঠিকানা খোঁজেন।
এরপর পশ্চিম ভুরুলিয়া মাঝির খোলায় মতিউর রহমান সরকারের ভাই ভাই বিস্কুট ফ্যাক্টরির নতুন চুক্তি নিয়ে যখন তিনি আশাবাদী, তখনই জাকারিয়া আলম শর্ত জুড়ে দেন যে, চুক্তিপত্র আগে তার নামে হতে হবে। বিশ্বাস করে শাহজালাল তার নামেই চুক্তি করেন, কিন্তু পরবর্তীতে তাকে নতুন চুক্তি দিতে নানা অজুহাত দেখিয়ে কালক্ষেপণ করা হয়।
অবশেষে ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে গাজীপুরে বেকারির কার্যক্রম শুরু করলেও ২৮ জানুয়ারি ২০২৪ সালে তিনি ব্যক্তিগত কাজে বাড়ি গেলে, সেই সুযোগে প্রতারক চক্র কারখানার দখল নেয় এবং ৫.৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে। শাহজালাল অভিযোগ করেন, এ ঘটনার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হয় এবং তাকে ব্যবসা থেকে সরিয়ে দেওয়ার নানা ষড়যন্ত্র চলতে থাকে।
আইনের দারস্থ হয়ে তিনি স্থানীয় কাউন্সিলর, পুলিশ ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু অভিযোগের পরও অভিযুক্তরা বারবার সালিশি বৈঠক এড়িয়ে যায়। এমনকি ওসি রাফিউল করিম অভিযুক্তদের পক্ষে অবস্থান নেন বলে শাহজালালের অভিযোগ।
এরই মধ্যে শাহজালালের সই করা চেক ব্যবহার করে প্রতারক চক্র আরও মামলা দায়ের করে। চেক ডিজঅনারের অভিযোগ এনে ৭ লাখ টাকার আরেকটি মামলা ঠুকে দেওয়া হয়। অথচ তিনি আগেই ২৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলায় মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছিল। প্রশ্ন থেকে যায়, যদি তিনি ওই টাকা নিয়ে আত্মগোপনে গিয়েই থাকেন, তাহলে পরে আবার কীভাবে আরও টাকা লেনদেনের ভিত্তিতে নতুন মামলা দায়ের হয়?
একাধিকবার জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও সামরিক প্রশাসনের কাছে বিচার চেয়ে শাহজালাল এখন হতাশ। তার দাবি, প্রশাসন প্রভাবিত হয়ে তার ন্যায়বিচারের পথে বাধা সৃষ্টি করছে, আর প্রতারক চক্র দখল করা প্রতিষ্ঠানে মালামাল বিক্রি করে লাভবান হচ্ছে।
শাহজালাল বলেন, “আমি আমার কষ্টের বিনিয়োগ হারিয়েছি, এখন মামলা আর প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসতে চলেছি। পরিবার নিয়ে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছি। আমি রাষ্ট্র ও প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন জানাই, যেন আমার প্রতিষ্ঠানের পূর্ণ অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হয়।”
এখন দেখার বিষয়, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ঘটনায় কী ব্যবস্থা নেয় এবং প্রতারণার এই চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় কি না।