মাধবদী (নরসিংদী) সংবাদদাতা : প্রতিদিনই কোনো না কোনো ঘটনার জের ধরে কোথাও না কোথাও চলছে অস্ত্রের মহড়া, ছিনতাই, ঝগড়া, মারামারি, সংঘর্ষ, বন্ধুক যুদ্ধ বা টেটা যুদ্ধ, রক্ষা পাচ্ছে না সংবাদকর্মীরাও। চলছে সাংবাদিকের ওপর হামলা এবং প্রকাশ্যে গোলাগুলি। এ যেন নরসিংদীর চরাঞ্চলগুলোতে নৃত্যদিনের ঘটনা। অথচ এ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের তৎপরতা প্রায় অদৃশ্য। টেটা যুদ্ধের নাম শুনলেই চোখে ভেসে উঠে নরসিংদীর রায়পুরা, আলোকবালী, নিলিক্ষা সহ চরাঞ্চলগুলোর ভয়াবহ সংঘর্ষের দৃশ্য। সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে, অপরাধীদের কাছে যেন জিম্মি হয়ে পড়েছে জীবন। সম্প্রতি নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের মুরাদ নগর গ্রামে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ৫৫ বছরের এক বৃদ্ধ ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় ও এ সংঘর্ষে আরো অন্তত বেশ ক’জন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ ঘটনাকে ঘিরে এলাকায় এখনো চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিহতের নাম ইদন মিয়া (৫৫)। তিনি সদর উপজেলার মুরাদনগর গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দলীয় বিভাজন তৈরি হয়। মেঘনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, দখল ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ ক্রমেই তীব্র আকার ধারণ করে। এরই ধারাবাহিকতায় ওই দিন খুব ভোরে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হলে ইদন মিয়াকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।

এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে রায়পুরার পলাশতলী গ্রামে পারিবারিক কলহে স্বামী মানিক মিয়ার ছুরিকাঘাতে স্ত্রী শিউলি আক্তার (৩০) খুন হন। ঘটনার সময় শিউলিকে ছুরি দিয়ে আঘাত করলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। ঘাতক স্বামী মানিক মিয়াকে পুলিশ আটক করেছে।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার জানান, আলোকবালীর চরাঞ্চলে সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক নারী নিহত হয়েছেন। ঘটনার বিস্তারিত জানতে কাজ করছে জেলা পুলিশ। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

উল্লেখ্য এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুইপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ইদন মিয়া নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়। এসময় আরো বেশ ক’জন গুরুতর আহত হয়। এই ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করতে সদর হাসপাতালে গেলে সন্ত্রাসীরা যুমনা টিভির স্টাফ রিপোর্টার আইয়ুব খানের উপরও হামলা চালায়, এতে রক্তাক্ত জখম হন তিনি। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করেন। নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত প্রক্রিয়া চলছে। এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় নরসিংদীতে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে।

সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিকের মাধবদীর সভাপতি মকবুল হোসেন বলেন, গত ৫ আগস্টের পর পুলিশের মনোবল দুর্বল হয়েগেছে, অপরাধ বেড়েছে। এখনই নিয়ন্ত্রণ না করলে মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নেবে। নরসিংদীতে নৃত্যদিনের সন্ত্রাসী ঘটনায় সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বিরাজ করছে।