আবু সাইদ বিশ্বাস, সাতক্ষীরা: পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবে পর্যটক কমছে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে। একসময় বছরে কয়েক লাখ পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করলেও বর্তমানে সে সংখ্যা অর্ধেকের নিচে নেমেছে। বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের একটি বড় অংশ সাতক্ষীরায় অবস্থিত, যা এখানকার প্রধান পর্যটন আকর্ষণ। বাস কিংবা পরিবহন থেকে নামলেই দেখা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের দৃশ্য। তাই বলা হয়, ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়ক পথে সুন্দরবন’। বাংলাদেশের ছয় জেলা জুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান হলেও একমাত্র সাতক্ষীরা থেকে সরাসরি সড়ক পথে গিয়ে দেখা যায় বনের দৃশ্য। দিনটি উপলক্ষে সাতক্ষীরায় জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করে। টেকসই উন্নয়নে পর্যটন এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সাতক্ষীরায় বিশ্ব পর্যটন দিবস ২০২৫ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত শনিবার বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের আয়োজনে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এতে সভাপতিত্ত্ব করেন।
বন বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে পশ্চিম বন বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জ হয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করেন ৫২ হাজার দেশি ও ৫০ জন বিদেশী পর্যটক। যেখানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুন্দরবনে প্রবেশ করেছেন মাত্র ৪১ হাজার দেশি ও ১৮০ জন বিদেশী পর্যটক। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩৯ হাজার ৪৭৪ জন পর্যটক সুন্দরবনে এসেছেন। এর মধ্যে দেশী পর্যটক ৩৯ হাজার ৩৭১ জন এবং বিদেশী ১০৩ জনএ খাত থেকে সরকারের আয় হয় ২২ লাখ ৭৭ হাজার ৮৯০ টাকা।
এ জেলার একেবারে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের তীর ঘেঁষে রয়েছে সুন্দরবনের দীর্ঘ অংশ। সীমান্তের রায়মঙ্গল, মাহমুদা, মালঞ্চ, আড়পাঙ্গাশিয়াসহ বেশ কয়েকটি বড় নদী ও অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন খাল রয়েছে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ এলাকায়। এসব নদী ও খালের দুই পাড়ে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মুগ্ধ করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। এছাড়া মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। সুন্দরবনের ভেতরে কলাগাছিয়া ও কচিখালী স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। তবে দেবহাটার রূপসি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এবং মুন্সিগঞ্জের আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার উল্লেখযোগ্য স্থান। এই মিনি সুন্দরবন সীমান্তের ইছামতি নদীর তীরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য চমৎকার একটি স্থান। আর আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার সুন্দরবন সংলগ্ন এই কেন্দ্রে মাছের জাদুঘরসহ বিভিন্ন আকর্ষণ রয়েছে। এছাড়াও যশোরেশ্বরী কালীমন্দির ও নলতা শরীফ এর মতো ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
পর্যাপ্ত হোটেল-মোটেল ও আধুনিক জলযান না থাকায় এই রেঞ্জে পর্যটকদের আগমন দিন দিন কমছে। এতে পর্যটনের ওপর নির্ভরশীল উপকূলীয় এলাকার হাজারও মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়েছে। অনেক ট্যুর অপারেটর এরই মধ্যে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এছাড়া সুন্দরবনের ভেতরে কটকা, কচিখালী, নীলকমল, হিরণ পয়েন্ট, নোটাবেকী, পুষ্পকাঠী, মান্দারবাড়িয়া, হলদেবুনিয়ার মতো অভয়ারণ্য এলাকায় ভ্রমণের জন্য দেশি পর্যটকদের দৈনিক ভ্রমণ ফি ৩০০ টাকা। বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে। সেই হিসাবে তিন দিনের প্যাকেজে একজন দেশী পর্যটককে শুধু সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য ভ্রমণ ফি দিতে হচ্ছে ৯৪৫ টাকা। এর সঙ্গে লঞ্চ ভাড়া, খাবার, গাইড, সিকিউরিটি ফি, অবস্থান ফিসহ নানান খরচ যুক্ত হয়।
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মশিউর রহমান বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালুর পর এই রেঞ্জে বিপুল পর্যটক আসতে পারে এমন চিন্তা থেকে বন বিভাগ এখানকার অবকাঠামো নির্মাণে কিছু প্রকল্প নেয়। এর মধ্যে কলাগাছিয়া ও দোবেকি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্রে নতুন ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, কংক্রিটের ট্রেইল নির্মাণ, কুমির, হরিণের শেড নির্মাণসহ বেশকিছু কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের নৌযানে ওঠার সুবিধার্থে মুন্সিগঞ্জ ও কলাগাছিয়ায় নতুন জেটি স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া এখন অনলাইনে সুন্দরবনে প্রবেশের পাস (অনুমতিপত্র) করা যাচ্ছে। কিন্তু সাতক্ষীরা-মুন্সিগঞ্জ সড়কের সমস্যার কারণে এদিকে পর্যটকরা আসতে আগ্রহী হচ্ছেন না।