ঝিনাইদহ সংবাদদাতা : সরকারি হাসপাতালে গেলে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যায়, এমন ধারণা পোষণ করেন অনেকেই। আর এটিই যেন এদেশের সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার করুন বাস্তবতা।
সরকারি হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা আবর্জনা ময় পরিবেশ, চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলা, অপ্রতুল চিকিৎসা সরঞ্জাম, নিরাপত্তাহীনতা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ না থাকার কারণে বেসরকারিভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে বাধ্য হয় বেশিরভাগ মানুষ।
আর সেখানে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের ঝিনাইদহ জেলার একমাত্র ভরসাস্থল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান দায়িত্ব নেওয়ার পর হাসপাতালে এসেছে অনেক পরিবর্তন, বদলে গেছে সেবার চিত্র। সরকারি চিকিৎসা সেবায় আস্থা ফিরেছে মানুষের। হয়রানি আর ভোগান্তির পরিবর্তে এখন রোগীদের মুখেই শোনা যায় হাসপাতালে সেবা কার্যক্রমের প্রশংসা। সেবার মান উন্নয়নের কারণে রুগী বাড়ায় এ খাত থেকে হাসপাতালের আয়ও বেড়েছে। সরকারি এ হাসপাতালে রোগিদের এখন অন্য যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সেবা দিচ্ছে। হাসপাতালের জরুরী বিভাগে প্রবেশ করলেই মনে হবে যেন কোন প্রাইভেট হাসপাতাল। রোগী এলেই ছুটে আসছেন কর্তব্যরতরা।
হাসপাতাল সূত্র জানাই ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে যোগদান করেন ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান। যোগদানের পর পরই তিনি হাসপাতালে সেবার মান উন্নয়ন, পরিছন্নতা চিকিৎসা বান্ধব পরিবেশ ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা জোরদার এর উপর সার্বিক গুরুত্ব দেন তিনি।
এর অংশ হিসেবে গেল কয়েক মাসেই হাসপাতালের কর্মকর্তা- কর্মচারীদের শতভাগ বায়োমেট্রিক হাজিরা নিশ্চিত, দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে সবার নেমপ্লেট ও আইডি কার্ড নিশ্চিতকরণ, দালাল নির্মূলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট দিন ও সময় ব্যতীত হাসপাতালে ঔষধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের প্রবেশ নিষেধ এবং রোগীর প্রেসক্রিপশনের ছবি তোলা বন্ধ, হাসপাতালের ভেতর থেকে অবৈধ দোকান পাট ও হকার উচ্ছেদ এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার প্রতি বিশেষ জোর দেন তিনি।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাবারের মান উন্নয়ন এবং চিকিৎসা সেবার মান বাড়াতে পরিচালক উপপরিচালক ও সহকারি পরিচালকদের প্রতিদিন হাসপাতালে রাউন্ড নিশ্চিত করেন। এক সময় হাসপাতালে রোগীদের মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে নানা রকম হয়রানির অভিযোগ উঠতো। মেডিকেল সার্টিফিকেট পেতে হাসপাতালে দিনের পর দিন দৌঁড়ঝাঁপ দিতে হতো।
বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মোস্তাফিজুর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর সেই হয়রানি বন্ধ হয়েছে। এছাড়া রোগীর বিদায় কালীন ছাড়পত্র সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের নার্সিং কর্মকর্তারা বিতরণ করা নির্দেশ দেন এই তত্ত্বাবধায়ক। ফলে ছাড়পত্রের জন্য রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে না। হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে রোগী তাদের স্বজন ও ঝিনাইদহের সুশীল মহল থেকে আগে অনেক প্রশ্ন উঠত। এই অবস্থায় বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক দায়িত্ব নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দেন। এতে করে রুগি ও তাদের স্বজনরা দালাল কর্তৃক প্রতারিত যাতে না হন সে ব্যাপারে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের উদ্যোগ নেন তত্ত্বাবধায়ক মুস্তাফিজুর রহমান।
হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখেন এই তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মুস্তাফিজুর রহমান।
হাসপাতালের সেবার মান সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন আমি এখানে যোগদানের পর অনেক অব্যবস্থাপনা আমার নজরে আসে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিতে বায়োমেট্রিক হাজীরার ব্যবস্থা করা হয়। সে কারণে এখন সার্বক্ষণিক চিকিৎসক পাওয়া যায়। বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। রোগীরা এখন এসব উদ্যোগের সুফল ভোগ করছে।
তিনি আরো বলেন, হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসক রয়েছেন ২০ জন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ১২ জন সেবিকা রয়েছেন ৭২ জন। এসব ডাক্তার ও নার্সরা নিয়মিতভাবেই রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন হাসপাতালের জরুরিও বহির্বিভাগে।