ফটিকছড়ি সংবাদদাতা : চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির পাইন্দং ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ ফকিরাচাঁন-মাদার্শাবাড়ি সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারবিহীন অবস্থায় পড়ে আছে। সড়কের বিভিন্ন স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। কোথাও কোথাও রাস্তার অস্তিত্বই মুছে গেছে। বর্ষা মৌসুমে কাঁদা-পানিতে তলিয়ে গিয়ে চলাচল একেবারেই দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। তবুও ঝুঁকি নিয়েই চলছে অটোরিকশা, সিএনজি, এমনকি পণ্যবাহী গাড়িও। স্থানীয়দের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে এই দুর্ভোগ সহ্য করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সড়কটি সংস্কারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে জনদুর্ভোগের মাত্রা দিন দিন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পাইন্দং ইউনিয়নের ফকিরাচাঁন এলাকায় সড়কের বেহাল অবস্থা চরমে পৌঁছেছে। ২ বছর পূর্বে আঁধায়েরঠেক থেকে ভূঁইয়াবাড়ি পর্যন্ত প্রায় ১৬০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি অংশ এইচবিবি (হুইল বেসড বিটুমিনাস) দ্বারা উন্নয়ন করা হলেও সড়কের বাকি অংশজুড়ে বিরাজ করছে চরম দুর্দশা। বিভিন্ন স্থানে সড়কের মাটি ও ইট উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। কিছু কিছু জায়গায় সড়কের চিহ্নটুকুও আর অবশিষ্ট নেই। বর্ষা মৌসুমে গর্তগুলো পানি জমে চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। সড়কের পাশে কোথাও কোথাও গভীর খাদের সৃষ্টি হয়েছে। যেখানে সামান্য অসাবধানতাই বড় দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। পথচারী ও যানবাহন চালকদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে সিএনজি অটোরিকশা, এমনকি পণ্যবাহী গাড়িগুলোও হেলে দুলে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।

পথচারী আব্দুল মালেক বলেন, “এই রাস্তা দিয়ে হাঁটাও এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে। স্কুলের শিশুদের কাঁদা মাড়িয়ে যেতে হয়, আর বালু ও ইটের গাড়ির কারণে হাঁটার জায়গাটুকুও থাকছে না। প্রতিদিনই আমাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।”

স্থানীয় বাসিন্দা এম এ সুজন বলেন, ফকিরাচাঁন সড়কের বেহাল অবস্থায় আমরা চরম ভোগান্তিতে আছি। সারাদেশে উন্নয়ন হলেও এ সড়কে কোনো কাজ হয়নি। সংশ্লিষ্টদের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

স্থানীয় দোকানী রিপন আলী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ফকিরাচাঁন সড়কটি মেরামত না হওয়ায় চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষ চরম দুর্ভোগে আছে। জানি না, এই কষ্ট আর দুর্ভোগ কবে নাগাদ শেষ হবে।

পাইন্দং ইউপি চেয়ারম্যান একেএম সরোয়ার হোসেন স্বপন বলেন, ফকিরাচাঁন সড়কটি নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং এলজিইডিতে তদবির চলছে। তিনি জানান, পুরো সড়ক এলজিইডির আওতায় না থাকলেও তাজুর ঘাটা থেকে হালদার পাড় পর্যন্ত অংশটি এলজিইডির আইডিভুক্ত। তবে হালদার পাড় পর্যন্ত কিছু অংশ এখনো আইডির বাইরে রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে।

ফটিকছড়ি উপজেলা প্রকৌশলী তন্ময় নাথ বলেন, ফকিরাচাঁন সড়কের উন্নয়নে আমরা ইতোমধ্যে জরিপ ও প্রস্তাব পাঠিয়েছি। সড়কটির একটি অংশ এলজিইডির আইডিভুক্ত হলেও কিছু অংশ এখনো আইডির বাইরে রয়েছে। আইডি অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

লক্ষ্মীপুর

লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালালবাজার তেমুহনী থেকে মীরগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি চরম বেহাল অবস্থায় পড়েছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কের পিচ ও পাথর উঠে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত ও খানাখন্দ। কোথাও কোথাও জমে থাকা পানি ও কাঁদায় চলাচল হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ছোট বড় যানবাহন, ঘটছে দুর্ঘটনা, সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এতে করে লক্ষ্মীপুর সদর, রায়পুর ও রামগঞ্জ উপজেলার লাখ লাখ মানুষ প্রতিনিয়ত ভোগান্তিতে পড়ছেন।

রোববার (২৭ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের প্রায় ৯ কিলোমিটারজুড়ে কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি খারাপ অবস্থা দালালবাজার থেকে চৌধুরী বাজার ও কাফিলাতলি থেকে মীরগঞ্জ বাজার অংশে। এসব স্থানে অটোরিকশা, সিএনজি, ট্রাকসহ যানবাহনগুলো ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছে। যানবাহনের ধীরগতির কারণে প্রায় সময়ই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিদিন কোনো না কোনো যানবাহন গর্তে আটকে পড়ে। তখন পুরো রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যাত্রীদের নামিয়ে দিতে হয় মাঝপথেই। এতে সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়তে হয় অসুস্থ রোগীদের। সড়কের এমন অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্স চলাচলেও বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।

সিএনজি চালক মো. ইউসুফ বলেন, ‘ভাঙাচোরা রাস্তায় গাড়ি চালাতে গিয়ে প্রায়ই নাটবল্টু খুলে পড়ে যায়। মাত্র ৯ কিলোমিটার যেতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। এতে গ্যাস বেশি খরচ হয়, কিন্তু অতিরিক্ত ভাড়া সবসময় আদায় করা যায় না। অনেক দিনই ক্ষতিতে পড়তে হয়।’

স্থানীয় সামাজিক সংগঠন স্বাধীনতা স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল কবির বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসছি। সড়কটি এখন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। দ্রুত টেকসই সংস্কার না হলে ভোগান্তি আরও বাড়বে।’

তিনি আরও জানান, সড়কটির দুই পাশে প্রায় ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং ৬টি ছোট বাজার রয়েছে। লক্ষ্মীপুর সদর, রামগঞ্জ, রায়পুর উপজেলা ছাড়াও চাঁদপুর ও নোয়াখালীর অসংখ্য মানুষ এ সড়ক ব্যবহার করে থাকেন।

চৌধুরী বাজারের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রায় সময় দোকানের মালামাল আনতে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। সড়কের অবস্থা খারাপ হওয়ায় পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে, কিন্তু গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়তি মূল্য নেওয়া সম্ভব নয়। এতে লাভ অনেক কমে গেছে।’

কাজীর দীঘিরপাড় সমাজ কল্যাণ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজাম উদ্দিন সময়ের কন্ঠস্বরকে বলেন, ‘এই রাস্তাটি যখনই নির্মাণ করা হয়, অত্যন্ত নি¤œমানের কাজ করা হয়। নির্মাণের ছয় মাসের মধ্যে আস্তে আস্তে ফাটল শুরু হয়। বর্তমানে এটি প্রায় চলাচলের অনুপযোগী, এবং এখানে প্রায় সময় বড় বড় গাড়ি, বিশেষ করে ট্রাক, সিএনজি, অটোরিকশা এখানে অ্যাকসিডেন্ট হচ্ছে। এই রাস্তাটি নিয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। আমি আহ্বান করবো কর্তৃপক্ষের যাতে এই রাস্তাটি অতিদ্রুত সংস্কার করে মানুষের চলাচলের উপযোগী করে দেয়। আমাদের যাতায়াতকে আরও সহজ করে দেয়।’

এ বিষয়ে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সড়কটি বর্তমানে খুবই নাজুক। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই সংস্কার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।