গোপালগঞ্জ ও কক্সবাজারে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাকর্মীদের ওপর হামলার প্রেক্ষাপটে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “আমরা এখন অনেক ডিফিকাল্টিজের (অসুবিধা) মধ্যে আছি। বিভিন্ন জায়গা থেকে বাধা আসছে, নানা কৌশলে আমাদের কার্যক্রম ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।”
গতকাল রোববার সকালে চট্টগ্রাম নগরীর স্টেশন রোডস্থ মোটেল সৈকতে ‘জুলাই শহিদ’ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
সাক্ষাৎকালে শহিদ পরিবারগুলোর সদস্যরা আর্থিক অনটন, নিরাপত্তাহীনতা, রাজনৈতিক উপদেষ্টাদের অবহেলা এবং মর্যাদাহানির অভিযোগ তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, “আমরা এখন সারাদেশে ঘুরে শহিদ পরিবারগুলোর সঙ্গে বসছি। অধিকাংশ পরিবারের সমস্যার ধরন প্রায় একই রকম কোনো এলাকায় কিছুটা সহায়তা পৌঁছালেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে চিত্র ভিন্ন।”
তিনি বলেন, “আমরা সরকারের ওপর বারবার চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছি যেন শহিদ পরিবারগুলো ন্যায্য সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা পায়। কিন্তু সরকারের অনেক উদ্যোগ মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে না। এখনো প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে স্বৈরশাসনের সহযোগীরা সক্রিয় রয়েছে, যার ফলে শহিদ পরিবারগুলোর প্রতি প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত হচ্ছে না।”
শহিদ পরিবারের সদস্যদের উদ্দেশে নাহিদ বলেন, “আমরা রাজনৈতিক দল হিসেবে নয়, আপনাদের আত্মীয় হিসেবেই এসেছি। আমরা একসঙ্গে অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছি, সেই ঐক্যের জায়গা থেকেই আপনাদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি। শহিদদের কোনো রাজনৈতিক দল হয় না তারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন।”
শহিদ পরিবারের সদস্যদের অবমাননা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “উপদেষ্টারা আপনাদের অসম্মান করেছেন এ তথ্য আমাদের জানা ছিল না। আমরা এর প্রতিবাদ করব এবং বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেব।”
জুলাই সনদের বিষয়ে তিনি বলেন, “জুলাই সনদ কার্যকর হলে অভ্যুত্থানের একটি সাংবিধানিক ভিত্তি তৈরি হবে। আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে একটি ‘গণঅভ্যুত্থান সেল’ গঠন করছি। আগামী ৩ আগস্ট আমাদের বড় কর্মসূচি রয়েছে। সরকার বলছে ৫ আগস্টের আগেই তারা ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ ও ‘জুলাই সনদ’ দেবে। আমরা এই ঘোষণার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।”
সাক্ষাৎ শেষে এনসিপি নেতারা চট্টগ্রাম থেকে রাঙামাটির উদ্দেশ্যে রওনা দেন, যেখানে তারা দলের চলমান পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন।
এনসিপির পদযাত্রা: বহদ্দারহাট থেকে বিপ্লব উদ্যান পর্যন্ত জনস্রোত
জুলাই পদযাত্রা’র অংশ হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রোববার চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাপক জনসমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। বহদ্দারহাট মোড় থেকে শুরু হওয়া এই পদযাত্রা মুরাদপুর ও দুই নম্বর গেইট হয়ে বিপ্লব উদ্যান পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। হাজারো নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পুরো পথজুড়ে সৃষ্টি হয় লোকারণ্য। শহরের রাজপথ যেন একপর্যায়ে মিছিলের ঢেউয়ে দুলে ওঠে।
সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে নেতাকর্মীরা বহদ্দারহাট মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেন। ঢোলবাদ্য আর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা— “মুজিববাদ মুর্দাবাদ”, “ইনকিলাব জিন্দাবাদ”, “আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই” ইত্যাদি স্লোগানে প্রতিবাদ ও আকাঙ্ক্ষা একসাথে ফুটে ওঠে।
পদযাত্রার সম্মুখভাগে নেতৃত্ব দেন এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ডা. তাসনীম জারা। তার সঙ্গে ছিলেন নারী নেত্রীদের একটি দল। পেছনে ছিলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম, সদস্য সচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিনসহ কেন্দ্রীয় ও আঞ্চলিক নেতারা।
মিছিল যখন অগ্রসর হয়, তখন সড়কের দু’পাশে জড়ো হন হাজারো উৎসুক মানুষ। নেতারা বারবার হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছা জানান। বিপ্লব উদ্যানে পৌঁছার পর সেখানে অনুষ্ঠিত হয় এক জনসভা। নেতাদের বক্তৃতা, স্লোগান ও করতালিতে সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
পদযাত্রা ও সমাবেশ ঘিরে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অতিরিক্ত পুলিশ, গোয়েন্দা সদস্য এবং ডগ স্কোয়াড মোতায়েন করা হয়। নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, “কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে ষোলশহর পর্যন্ত এলাকাজুড়ে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।”
চট্টগ্রামের আগে এনসিপির জুলাই পদযাত্রা শুরু হয় কক্সবাজার থেকে। শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় নেতারা কক্সবাজারে এসে পৌঁছান। শনিবার সকালে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে পদযাত্রা শুরু করে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ দৌলত ময়দানে সমাবেশ করেন। এরপর চকরিয়া, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে পদযাত্রা শেষে রবিবার সকালে তারা চট্টগ্রাম পৌঁছান।
সোমবার খাগড়াছড়িতে এনসিপির পদযাত্রার পরবর্তী কর্মসূচি পালিত হবে বলে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।