বগুড়া সিটি কর্পোরেশনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা গতকাল রবিবার এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। এর ফলে বগুড়াবাসীর প্রাণের দাবি বাস্তবায়নে অনেকটাই এগিয়ে গেল। সীমানা নিয়ে কোন জটিলতা সৃষ্টি না হলে খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই সিটি কর্পোরেশনের মূল কার্যক্রম শুরুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বগুড়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৭৬ সালে। বর্তমানে এর আয়তন ৬৯.৫৬ বর্গ কিলোমিটার। ৫৬টি মৌজা ও ২১টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পৌরসভা। এখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষের বসবাস। উত্তরের রাজধানীখ্যাত বগুড়া ভৌগোলিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নানাভাবে সমৃদ্ধশালী একটি অঞ্চল। তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও সদিচ্ছার অভাবে উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে ছিল এই জনপদ। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময় থেকেই সিটি কর্পোরেশন করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তীতে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। এমনকি পৌরসভার বর্ধিত অংশের উন্নয়নেও কোন বরাদ্দ দেয়নি আওয়ামীলীগ সরকার। অবশেষে দীর্ঘ দিনের বঞ্চনার অবসান হতে চলেছে। ২০১১ সালের ৩০ জুলাই স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ১৩টি জেলার পৌরসভার বিষয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই তালিকায় বগুড়া ছিল। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে থমকে গিয়েছিল অগ্রগতি। বগুড়া পৌরসভার বর্তমান স্থায়ী জনসংখ্যা প্রায় ৯ লাখ এবং ভোটার পৌনে ৩ লাখ। পৌরসভার নিজস্ব আয় দিয়ে বড় ধরনের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করার নিয়ম নেই। তাই বিশাল জনগোষ্ঠী আজও কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত। তৎকালীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে ২০০৩-০৪ অর্থবছরে প্রায় ৫২ কোটি টাকা ব্যয়সাপেক্ষ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে তখনকার ১২টি ওয়ার্ডের রাস্তা, ড্রেন, কালভার্টসহ অবকাঠামোর উন্নয়ন করা হয়। কিন্তু পৌরসভার আয়তন বাড়ার পর সম্প্রসারিত ৯টি ওয়ার্ডের মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। রাস্তা নেই, ড্রেন নেই। অনেক কষ্টে ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা দিয়েই তাদের চলতে হয় ও আয় রোজগার করতে হয়। আবার অনেক রাস্তা এখনও কাঁচাই রয়ে গেছে। বেশির ভাগ রাস্তার পাশে ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। ফলে বর্ষাকালে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বগুড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র সাতমাথাসহ শহরের উল্লেখযোগ্য স্থানগুলোতেও পানি বেধে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বগুড়া পৌর প্রশাসক ও স্থানীয়র সরাকার বিভাগের উপ-পরিচালক “মাসুম আলী বেগ” বলেন, গণবিজ্ঞপ্তি জারির ৪৫ দিনের মধ্যে যদি সীমানা নিয়ে কারো আপত্তি না থাকে তাহলে আমরা পরবর্তী ধাপগুলোর কার্যক্রম শুরু করবো। আর যদি এই বিজ্ঞপ্তির পরে নাগরিকদের পক্ষ থেকে কোনো আপিল করা হবে তাহলে পরবর্তীতে সেগুলো শুনানীর মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হবে। বগুড়া জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা বলেন, সিটি কর্পোরেশনের জন্য জেলা প্রশাসক সম্মেলনে প্রস্তাব পাঠানোর পাশাপাশি আলাদাভাবে চিঠিও দিয়েছিলাম। সেই চিঠির প্রেক্ষিতেই গণবিজ্ঞপ্তির প্রকাশের নির্দেশনা দিয়েছে। সে অনুযায়ী আমরা গণ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করছি। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর বিধি মোতাবেক মতামতের জন্য ৩০ দিনের মধ্যে যদি আপত্তি আসে, সেগুলো পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে। এর পর স্থানীয় সরকার বিভাগে পাঠিয়ে দিব। এসবকিছু যাচাই বাছাই করার পর গেজেট আকারে বিজ্ঞপ্তি জারি হবে।