নৈসর্গিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি ওয়ার্ড হেরিটেজ খ্যাত সুন্দরবন। আর সেই জনমানবশূন্য গহীন বনে গাছগাছালির ভীতর ইট পাথরের তৈরি সুউচ্চ টাওয়ার। যেখানে দাঁড়িয়ে দেখা যায় বিস্তীর্ণ এক সবুজের সমারোহ। রয়েছে ৩৫০ বছরের আগের মন্দির। অদ্ভুত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের সমন্বয়ের নাম শেকেরটেক।
খুলনা জেলার দক্ষিণের উপকূলীয় জনপদ কয়রা অনেকটা সুন্দরবন বেষ্টিত। কয়রা সদর পিচ ঢালা পথ বেয়ে ৭-৮ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবন সংলগ্ন কাটকাটা। সেখান থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে চেপে শেকেরটেক ইকো টুরিজম। শাকবাড়িয়া দিয়ে ট্রলারে একপাশে লোকালয়, অন্যপাশে সুন্দরবন। কখনো কেওড়া গাছের সারি, কখনো গেওয়া গরান বাইনের সমারোহ। গহীন জঙ্গলের ভিতর ঝপঝোপিয়া ও আড়ুয়া শিবসা নদী দিয়ে এঁকেবেঁকে ট্রলার চলে যায় গহিন বনের শিবসা নদীতে। কেওড়া বনের নিচে ঝোপজঙ্গল কম। হরিণ ও বন্য শূকরের দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। বানরের পাল দৌড়ঝাঁপ করছে। ‘খাল বা নদীর ধারে দল বেঁধে হরিণের চলাফেরার দৃশ্য এখন হরহামেশাই চোখে পড়ে।’ এরপর সেই গহীন বনে শেকেরটেক ইকোটুরিজম। সাধারণত ইকো টুরিজম বলতে সেখানে দেখভালের জন্য লোকজন থাকবে, খাবার দোকানসহ শিশুদের জন্য নানান অয়োজন। কিন্তু জনমানবশূন্য এক স্থান। আশেপাশে পশু পাখি, বাতাসের শো শো শব্দ, গাছের মড় মড় আওয়াজ ছাড়া নিস্তব্দ নিরাবতা। ম্যানগ্রোভ এই বনে সুন্দরী, গেওয়া, গরানসহ শত শত প্রজাতির গাছ সচরাচর দেখা গেলেও গহিন বনে গাবগাছের বাগান দেখাটা বিস্ময়ের। শেখেরটেক খাল থেকে মন্দিরের চারপাশ দিয়ে পাকা পথ তৈরি করা হয়েছে। পর্যটকদের সুন্দরবন দেখার জন্য নির্মাণ করা হয়েছে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। আর চারপাশে গাছগাছালির ভেতর দিয়ে এক থেকে দেড় কিলোমিটারের দীর্ঘ পাকা পথ ধরে বনের মধ্যে অনায়াসে হেঁটে হেঁটে দেখা যায় সুন্দরবনের সৌন্দর্য। বনে ঘুরতে ঘুরতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে বসার জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশ্রামঘর। আর শেখেরটেক মন্দিরে যাওয়ার পথেই দেখা মেলে মধ্যযুগীয় স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ। চোখে পড়ে কোনোরকমে টিকে থাকা বাড়ির দেয়াল ও ইটের স্তূপ। কংক্রীটের সরু রাস্তায় দিয়ে হাটার সময় দু’পাশে চোখে পড়ে গেওয়া,গরান,বাইনসহ হরেক রকমের গাছে ফুটে থাকা ফুল। সম্প্রতি সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কার করা হয়েছে স্থানটি।
জানা যায়, আগে এখানে নিয়মিতই বাঘের দেখা মিলতো। কংক্রীটের কাজ করা শ্রমিকরা জানিয়েছেন ভয় নিয়েই কাজ করতেন তারা। চোখের সামনেই দেখেছেন বাঘ। বাঘের যাতায়াত থাকায় জায়গাটি বাঘের বাড়ি নামেও পরিচিত।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, শিবসা নদীর পাড়ের গাবগাছের বাগান ও প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষটি বারো ভূঁইয়া বা মোগলদের সমসাময়িক সময়কালের বলে মনে করা হয়। ওই এলাকাটি বনের অন্যান্য স্থানের তুলনায় কিছুটা উঁচু হওয়ায় বাঘের আধিক্য বেশি। কয়েক বছর আগেও গাবগাছের বাগান ঘিরে বড় ইটের তৈরি সীমানাপ্রাচীর ছিল। নদীর ভাঙনে হারিয়ে গেছে সেটি। তবে নদীভাঙনের বিষয়টি প্রাকৃতিক।