মহম্মদপুর (মাগুরা) সংবাদদাতা : মাগুরার মহম্মদপুরে মধুমতি নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে মধুমতি পাড়ের প্রায় বিশ গ্রামের মানুষ। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও মধুমতির পানি বৃদ্ধি পাওয়ার পর, এখন পানি কমতে শুরু করেছে। ফলে নদী পাড়ের প্রায় ২০ গ্রামের হাজারো মানুষের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক শুরু হয়েছে। আবার অনেকেই ভয়ে আগে থেকেই গাছপালা বিক্রি করে সরিয়ে নিচ্ছে ঘরবাড়ি। প্রতিবছর মধুমতি নদী থেকে অবৈধভাবে প্রচুর বালু উত্তোলন করা হয়। এই বালু উত্তোলনের ফলে মধুমতি নদী ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো। এতে নিঃশ্ব হয়ে পড়ে নদী পাড়ের শতশত পরিবার। তাদের ঠাঁই হয় খোলা আকাশের নিচে।
জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে মধুমতি নদীর পানি বৃদ্ধি পায়, এর ফলে ভাঙনের তীব্রতা ভয়াবহ আকার ধারণ করে থাকে। এতে নদী গর্ভে বিলীন হয় বসতবাড়ী, গাছপালা ও শতশত একর আবাদি জমি। জমিজমা ও বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয় অনেকে। অসহায় অবস্থায় অনেকেরই আশ্রয় হয় খোলা স্থানে। বছরের অন্য সময় নদী পাড়ের মানুষ শান্তিতে থাকলেও বর্ষা মৌসুমে কষ্ট আর ভয়ে সময় যেন যেতে চায়না তাদের। ভয়ে ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটে মধুমতি পাড়ের মানুষগুলোর।
তবে স্থানীয়দের ধারণা নদী ভাঙনের এই তীব্রতার জন্য দায়ি অবৈধ্য বালি উত্তোলণ। শুষ্ক মৌসুমে মধুমতি নদী থেকে বালি উত্তোলন করে কিছু অসাধু বালি ব্যবসায়ি। এর ফলে বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ আকার ধারণ করে মধুমতি নদী। রাক্ষুসী রুপে প্রতিবছরই গিলে খায় হাজার হাজার একর ফসলি জমি, গাছপালা ও ঘরবাড়ীসহ লোকালয়। সরেজমিনে গেলে এমনিভাবে কষ্টের সাথে মনে কথাগুলো ব্যক্ত করেন নদীপাড়ের অসহায় মানুষগুলো।
সরেজমিনে নদী ভাঙন এলাকায় গেলে দেখা যায়, নদী পাড়ে বসে আছে লোকজন, তাদের কপালে দূশ্চিন্তার ভাঁজ। এবছরের ভাঙনে কি করবে ভেবেই পাচ্ছে না। প্রায় ২৫ একর চাষি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে, তিনবার ঘরবাড়ী সরিয়েছি, এবার শেষ সম্বল বসতভিটা ভাঙলে ঠাঁই হবে খোলা আকাশের নিচে। এটা ভেবে ভেবেই নির্ঘুম রাত কাঁটতে শুরু করেছে বলে আমাদেরকে জানান উপজেলার রুইজানী গ্রামের দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস ও উত্তম কুমার বিশ্বাস।
উপজেলার উত্তরে চরসেলামতপুর থেকে শুরু করে দক্ষিণে কালিশংকরপুর পর্যন্ত মধুমতির ভাঙনের মুখে রয়েছে। তাই নদীর তীরবর্তী বসবাসকারী মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে চরম আতঙ্ক। গোপালনগর, মহেষপুর, হরেকৃষ্ণপুর, ঝামা, চরঝামা, আড়মাঝি, যশোবন্তপুর, চরপাচুড়িয়া, রায়পুর, মুরাইল, ধুপুড়িয়া, জাঙ্গালিয়া, রুইজানি, কাশিপুর, ধুলজুড়ি, দ্বিগমাঝি, দেউলি ও ভোলানাথপুরসহ প্রায় বিশটি গ্রাম ভাঙনের শিকার। আর এই গ্রামগুলোর মধ্যে রয়েছে- মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগাহ, স্কুল, বাজার ও মন্দিরসহ অসংখ্য দোকান-পাট। এসব গ্রামের মানুষের কাছে প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ রুপে দেখাদেয় মধুমতি। এতে বাড়ছে ভূমিহীনের সংখ্যাও। তাই তাদের দাবি স্থায়ী বাঁধের।
গোপালনগর গ্রামের লায়লা পারভীন বলেন, বর্ষা মৌসুম আসলেই আমাদের চিন্তার শেষ থাকেনা, বাপ দাদার আমল থেকে কয়েকবার ঘরবাড়ী সরিয়েছি এবং অনেক ফসলি জমি ও গাছপালা নদী গর্বে বিলীন হয়েছে। মোঃ মফিজুর রহমান জানান, আমাদের প্রায় ২০ একর জমি নদী গর্ভে। এছাড়াও এলাকার অনেক বসতবাড়ী ও ফসলি জমি মধুমতি নদী ভাঙনের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে, তাই কতৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা নদী শাসনে স্থায়ী বাঁধ দেয়ার জন্য।