নদী খননে উ”চক্ষমতা সম্পন্ন ড্রেজারে ভরাট শোলমারী। দু’কোটি টাকার ড্রেজারটি এখন নষ্ট। অকেজো হয়ে পড়ে আছে চরে। এ জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদাসীনতাকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী। ড্রেজার পরিদপ্তরের দাবি মামলা জটে থেমে আছে নিলাম ও অপসারণ কার্যক্রম।
সূত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড এ্যাকশন প্লানের আলোকে ১৯৯২-৯৩ সালে খুলনা-যশোর নিষ্কাশন পুনর্বাসন প্রকল্প (কেজেডিআরপি) নামে ২২৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেয়। ওই প্রকল্পের আওতায় ৩০ কিলোমিটার নদী খনন, ৫৫৫ কিলোমিটার খাল খনন, ১১১ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়ন, ৩৮ টি কালভার্ট ও ৩০ টি সেতু নির্মাণ করা হয়। ওই ৩০ কিলোমিটার নদী খননে ১৯৯৮ সালে এ প্রকল্প থেকে দু’কোটি টাকা ব্যয়ে কেনা হয় একটি ড্রেজার মেশিন, একটি টাগ বোর্ড ও একটি হাউজ বোর্ড। ১৯৯৯-২০০০ সালে বাস্তবায়ন করা হয় শোলমারী নদীতে ১০ ভেন্টের রেগুলেটর। সব খাল খনন শেষে ওই বেন্টের বাইরে শোলমারী নদীতে রাখা হয় এ ড্রেজার, টাগ বোর্ড ও হাউজ বোর্ড।
বটিয়াঘাটা উপজেলার কাজিবাছা নদী থেকে শোলমারী, সালতা ও ভদ্রা নদী হয়ে বারোআড়িয়ার মোহনা পর্যন্ত নদীর দৈঘ্য ৩৩ কিলোমিটার। ওই নদীর নাব্যতা ঠিক রাখতে এ ড্রেজার মেশিন কাজে লাগানোর কথা ছিল। খনন শেষে ওই নদীর ভরা যৌবন থাকায় প্রবল স্রোতের কারণে ড্রেজার মেশিন, ট্যাগ বোর্ড ও হাউজ বোর্ডটি ১০ ভেন্টের খালে রাখা হয়। ইতোমধ্যে পলিতে শোলমারী নদী ভরাট হয়ে যায়। এ তিন যন্ত্রও আটকা পড়ে চরে। রোদ, বৃষ্টি, লোনা পানি এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অকেজো হয়ে যায়। ওই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলে ২০১৪ সালে এসব মেশিন পানি উন্নয়ন বোর্ড লবণচরাস্থ ড্রেজার পরিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করে। ড্রেজার পরিদপ্তর ২০১৬ সালে ওই মেশিন ভাড়া দেয়। হাওলাদার কনস্ট্রাকশনের কাছে পরিদপ্তর ভাড়া বাবদ টাকা দাবি করে ৪ লাখ ২৬ হাজার টাকা। এ টাকা না দেওয়ায় ২০২০ সালে পাউবোর ওই দপ্তর মামলা করে। মামলায় পরিদপ্তরের পক্ষে রায় দেয়। পরে হাওলাদার কনস্ট্রাকশন এ রায়ের বিপক্ষে আপিল করেন। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৩ জুলাই বিভাগীয় কমিশনারের দপ্তর থেকে ড্রেজার পরিদপ্তরের স্বপক্ষে রায় পেয়েছেন।
শোলমারী খেয়াঘাটের বাসিন্দা মনোরঞ্জন মহলদার বলেন, আমার এখানে বসবাস করছি প্রায় শতবছর ধরে। খরস্রোতা শোলমারী পলিতে ভরাট হলেও ড্রেজার মেশিন দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকতে দেখেছি। ওই মেশিনের কারণে গেটের মুখে পলি জমে চর জেগেছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার ১০ ভেন্ট সংলগ্ন টিয়াবুনিয়া আলেকজান জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব বেলাল হোসেন বলেন, শোলমারী নদীর যখন ভরা যৌবন তখন থেকে মেশিনগুলো এখানে পড়ে রয়েছে। গেল এক যুগ গেটের খালের চরেই আছে এসব যন্ত্রগুলো। ওই মেশিন সচল থাকলে আজ এই বৃহৎ এলাকা জলাবদ্ধতা থাকতো না।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল কুমার সেন বলেন, আমি মাত্র ৭ দিন আগে যোগদান করেছি, এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবো না। তবে যতটা শুনেছি, ওটা নিয়ে মামলা চলছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি আতিকুর রহমান বলেন, ওই মেশিন অপসারণের জন্য খুলনা ড্রেজার বিভাগকে একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে।
ড্রেজার অপারেশন বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাওন আহমেদ বলেন, ২০১৪ সালে ওই ড্রেজার আমাদেরকে হস্তান্তর করা হয়। তখন সচল ছিল না। আমরা নৌ-বাহিনীর শিপইয়ার্ডে মেরামতের জন্য যোগাযোগ করলে অপ্রতুল টাকা দাবি করে। যে কারণে মেরামত করা হয়নি। ২০১৯ সালে গেটের খালে ওটি রাখা হয়েছে দাবি করে বলেন, মামলা চলমান থাকায় অপসারণ করা যাচ্ছে না। নিলামও করা যাচ্ছে না। কি কারণে মামলা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১৬/১৭ সালে ওই ড্রেজার হাওলাদার কনস্ট্রাকশনকে ভাড়া দেওয়া হয়। অকেজো ড্রেজার কেন ভাড়া দিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই ফার্ম মেরামত করে ড্রেজিং কাজ করবে এমন চুক্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়। ভাড়ার টাকা না দেওয়ায় মামলা করা হয়েছে। তাদের কাছে পাওনা ৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা বলে তিনি দাবি করেন।