মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান, মোংলা থেকে: বছরের পর বছর অবহেলা ও অনুন্নয়নের কারণে পিছিয়ে থাকা মোংলা বন্দর এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্রে সামনে এসেছে। রাজস্ব আদায়ে ধারাবাহিক উন্নতি, পণ্য হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিদেশি জাহাজ আগমনের হার বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দরটি আবারও সম্ভাবনার দিগন্তে ফিরে এসেছে। দেশীয় বাণিজ্য ব্যবস্থায় বন্দরটি এখন গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, যা বন্দর সংশ্লিষ্ট শ্রমিক, অপারেটর ও নৌ-পরিবহন খাতেও ইতিবাচক বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলছে।
আগের মতো জেটি ফাঁকা পড়ে থাকার দিন নেই। বর্তমানে জেটিতে প্রতিনিয়ত বিদেশি কার্গো জাহাজ নোঙর করে এবং কনটেইনার লোড-আনলোড কাজ দিন-রাত চলমান। অতীতে যে স্থবিরতা ছিল তা কাটিয়ে এখন প্রতিদিনই উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পণ্য খালাস হচ্ছে।
গত অর্থবছরে মোংলা বন্দরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৩৩০ কোটি টাকা, কিন্তু আয় হয়েছে ৩৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় প্রায় ১০ কোটি টাকা বেশি। আর চলতি অর্থবছর ২০২৫–২৬ এর জন্য রাজস্ব আয়ের নতুন টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪০ কোটি ২২ লাখ টাকা। বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশা, এবারও নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
এ বছর প্রায় ৮২০টি বিদেশি জাহাজ আগমনের পরিকল্পনা করা হয়েছে এবং পণ্য হ্যান্ডলিং টার্গেট নির্ধারণ করা হয়েছে ৯১ লাখ মেট্রিক টন।
গত পাঁচ বছরে মোংলা বন্দরের রাজস্ব প্রবণতা বিশ্লেষণে দেখা যায়Ñ২০২০Ñ২১ অর্থবছরে বন্দরটির আয় ছিল ৩৪৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। পরের বছর ২০২১Ñ২২ সালে আয় কমে দাঁড়ায় ৩১৭ কোটি ৭ লাখ টাকায়। ২০২২–২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আরও কিছুটা নি¤œমুখী হয়ে ৩০২ কোটি ৪২ লাখ টাকায় নেমে আসে। তবে এরপর থেকে আবার ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা দেয়; ২০২৩Ñ২৪ অর্থবছরে আয় বেড়ে হয় ৩১৯ কোটি টাকা এবং সর্বশেষ ২০২৪–২৫ অর্থবছরে আয় দাঁড়িয়েছে ৩৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকায়। অর্থাৎ, দুই বছর নি¤œমুখী থাকার পর শেষ দুই বছরে রাজস্ব পুনরায় ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে, যা বন্দর কার্যক্রমে উন্নতির ইঙ্গিত দেয়।
বাংলাদেশ লঞ্চ লেবার অ্যাসোসিয়েশন, মোংলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন—আগে পুরো সপ্তাহে কখনো জাহাজ আসত না, এখন প্রতিদিন নিয়মিত জাহাজ আসে এবং শ্রমিকদের কর্মসুযোগ বেড়েছে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক মোঃ মাকরুজ্জামান জানানÑমোংলা বন্দর এখন শুধু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাণিজ্যের কেন্দ্র নয়, বরং জাতীয় ট্রেড সিস্টেমে এর ভূমিকা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে বন্দরটিতে নতুন জেটি সংযোজন, উন্নত স্ক্যানিং সিস্টেম, আধুনিক গ্যান্ট্রি ক্রেন, ট্র্যাকিং সিস্টেম ও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে। এতে ট্রানজিট সময় কমে এসেছে, অপারেশনাল দক্ষতা বেড়েছে এবং পণ্যের নড়াচড়া শৃঙ্খল আরও গতিশীল হয়েছে।
ফলস্বরূপ মোংলা বন্দর এখন দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে চলছে এবং বাণিজ্যিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ চালিকা শক্তি হিসেবে অবস্থান তৈরি করছে।