শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) সংবাদদাতা : ‘৩৬ জুলাই (৫ আগস্ট)’ ফ্যাসিবাদ পতনের বর্ষপূর্তি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ দিন। দিনটি ঘিরে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে দিনভর ছিল প্রশাসনিক আয়োজন, বর্ণাঢ্য গণমিছিল, রাজনৈতিক সমাবেশ ও নানান কর্মসূচি। উপজেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির দুটি পৃথক গ্রুপ নিজ নিজ আয়োজনে দিনটি পালন করে নানান কর্মসূচির মধ্য দিয়ে।

সকালে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোছাঃ রনী খাতুন। উপস্থিত ছিলেন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান, প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, শিক্ষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ ছাত্র-জনতা। আলোচনা শুরুর আগে ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে’ আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শহীদদের রূহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন উপজেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান।

আলোচনায় অংশগ্রহণকারীরা বলেন, ‘৩৬ জুলাই’ শুধু কোনো একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নয়, এটি ছিল বঞ্চিত ও নির্যাতিত ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের নাম। বৈষম্যহীন ও ন্যায়ের ভিত্তিতে সমাজ গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বক্তারা বলেন, বর্তমান প্রজন্মকে এই চেতনায় উজ্জীবিত করে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রনী খাতুন বলেন, বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীলতা অত্যন্ত জরুরি। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো অভ্যুত্থান না ঘটে, সেজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

বিকালে জামায়াতে ইসলামী শ্যামনগর উপজেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত হয় বিশাল গণমিছিল। শ্যামনগর কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠ থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি উপজেলার প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে জেসি কমপ্লেক্সে সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুর রহমান। এতে অংশগ্রহণ করেন সাতক্ষীরা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য গাজী নজরুল ইসলাম, জেলা জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল মজিদ, উপজেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ গোলাম বারী, মাওলানা মঈনুদ্দিন মাহমুদ, সেক্রেটারি মাওলানা গোলাম মোস্তফা, অধ্যক্ষ অহীদুজ্জামান ও চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলামসহ বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, ৩৬ জুলাই বাংলাদেশের ইতিহাসে ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার প্রতিরোধের এক গৌরবময় অধ্যায়। তারা বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের বিরুদ্ধে যে গণজাগরণ শুরু হয়েছিল, তা ছিল একটি নতুন বাংলাদেশের পথে পদক্ষেপ। বক্তারা আরও বলেন, শহীদদের রক্ত বৃথা যাবে নাÑ একদিন এই দেশে ইসলামী ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে।