মোঃ লাভলু শেখ লালমনিরহাট : লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি বন্দী পরিবার গুলোর দুর্ভোগের শেষ নাই। পানি কমলেও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত রয়েছে।

ভারীবর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করলেও সোমবার সকাল থেকে তা কমতে শুরু করেছে। পানি কমলেও বন্যা এলাকার তিস্তাপাড়ের নিম্নাঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে লোকজন তাদের গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন সরকারি রাস্তা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধের ওপর। শুকনো খাবার মিললেও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটের কথা জানিয়েছেন তারা। এছাড়া বিপুল পরিমাণ আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। চরে এখনও বানের পানি ফসলি জমি তলিয়ে রেখেছে বলে জানান ওই চরের কৃষক গফুর মিয়া (৬৫)। প্রতি বছরেই ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢল আর ভারি বর্ষণের ফলে তিস্তা নদীতে বন্যার সৃষ্টি হয় এবং দেখা দেয় তীব্র নদী ভাঙন।

এর আগে রোববার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে যায়। পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের সবগুলো জলকপাট খোলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাউবো সূত্র জানায়, ভারতের উজানে ভারী বর্ষণের ফলে নদীতে পানির প্রবাহ হঠাৎ বেড়ে যায়।

পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ডুবে গেছে, আমন ধান, সবজির মাঠ ও পুকুর। সড়কপথ যোগাযোগ বন্ধ থাকায় এখন নৌকা ও ভেলা হয়ে উঠেছে চলাচলের একমাত্র মাধ্যম। বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে,

সোমবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচে এবং ধরলা নদীর শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ১৩২ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোড তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রুম ইনচাজ নুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, উজানের ঢল কিছুটা কম থাকায় সোমবার বেলা ৩টায় তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

পানি ধীরগতিতে নেমে যাওয়ার কারণে নদী সংলগ্ন আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবর্ধন হায়দারিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় এবং হাতিবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি পূর্বপাড়া সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়, সানিয়াজান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা আদর্শপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মরিয়ম বলেন,“স্কুলে গেছিলাম ক্লাসরুমে পানি থাকায় বাড়িতে ফিরে এলাম। মহিষখোচা ইউনিয়নের বালাপাড়া, কলতারপাড় গ্রামের স্কুল শিক্ষক দবিয়ার রহমান বলেন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি থাকায় আমাদের ক্লাস করাতে ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণে সমস্যা হয়েছে।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের গোবর্ধন এলাকার বাসিন্দা বিলকিছ বেগম বলেন, শনিবার রাত থেকে তিস্তা পানি বৃদ্ধি পায়। পরে রোববার সকালে বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে। চুলা ডুবে গেছে তাই আজ রান্নাও বন্ধ। হাতিবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের বাসিন্দা আফজাল হোসেন বলেন, হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়া জমির ধান ডুবে গেছে। এখন শুধু পানি আর হতাশা। পানি কমলেও নষ্ট হতে পারে ফসল।

লালমনিরহাট

সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের মোফাজ্জল হোসেন, দবিয়ার রহমান, কোরবান আলী, বীনা রানী রায়সহ অনেকেই বলেন, তিস্তার পানি ঘরবাড়ীতে ঢুকে পড়ায় রান্না-বান্না বন্ধ, ছেলে- মেয়েরা স্কুলেও যেতে পারছে না।

পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী শুণীল কুমার বলেন, রোববার তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। তবে সোমবার তিস্তার পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে পানি আর বাড়বে কি না তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার জানান, বন্যার্তদের সহায়তায় জেলা প্রশাসন কাজ করছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। চাল, ডাল, চিড়া ও শুকনো খাবার বিতরণ অব্যাহত রয়েছে।