DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

গ্রাম-গঞ্জ-শহর

এমসি কলেজ শিক্ষার্থীকে অপচিকিৎসায় ‘হত্যার ব্লু-প্রিন্ট’

অনৈতিক ঘটনাকে আড়াল করতে দায় চাপানো হয় ছাত্রশিবিরের উপর

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনের ন্যায় সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে খুনী সন্ত্রাসী ‘২৪ এর পরাজিত শক্তি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, তাদের দোসর, আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা গোষ্ঠী এমসি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী আহত ঘটনা নিয়ে নীল নকশায় মেতে উঠেছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ফাসানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে খুনী, জঙ্গি ছাত্রলীগ ও তাদের দোসর আওয়ামী লীগের বি টিম নামে পরিচিত তালামিযে ইসলামিয়ার নেতাকর্মীরা।

সিলেট ব্যুরো
Printed Edition

ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনের ন্যায় সিলেটের এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে খুনী সন্ত্রাসী ‘২৪ এর পরাজিত শক্তি নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ, তাদের দোসর, আশ্রয় প্রশ্রয়দাতা গোষ্ঠী এমসি ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী আহত ঘটনা নিয়ে নীল নকশায় মেতে উঠেছে। ইসলামী ছাত্রশিবিরকে ফাসানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে খুনী, জঙ্গি ছাত্রলীগ ও তাদের দোসর আওয়ামী লীগের বি টিম নামে পরিচিত তালামিযে ইসলামিয়ার নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি নিজেদের অনূকূলে নিতে এবার তারা ‘লাশের তালাশে’ হত্যার খেলায় মেতে উঠেছে। তাদের এই পাশবিকতায় ‘বলির পাঠা’ বানানো হচ্ছে আহত শিক্ষার্থী মিজানকে।

গত বুধবার দিবাগত রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে সহপাঠীদের হামলায় আহত হন মিজানুর রহমান মিজান। তাকে ভর্তি করা হয় সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসা শেষে গত বৃহস্পতিবার বেলা ২ টায় হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে চলে যান মিজান।

কিন্তু ঐদিন সন্ধ্যা ৭টায় তাকে আবার কে বা কারা হাসপাতালে ভর্তি করবে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের ৩/৪ জন ও তাদের আশ্রয়দাতা ৩জন মিলে মিজানকে ওসমানীতে ভর্তি করা হয়। মিজান নিউরো সার্জারি বিভাগের পিও-৫ নং বেডে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

কিন্তু মিজানকে দ্বিতীয় দফা ভর্তি যে অসৎ উদ্দেশ্যে এবং চক্রান্তমূলক তা পরিষ্কার হয় গত শুক্রবার দুপুরে। দুপুর সাড়ে ১২ টায় রোগীদের অধিকাংশ এটেনডেন্স যখন জুমআার নামাযে। তখনি একজন ইন্টার্ন চিকিৎসক মিজানের মেডিকেল ফাইল দেখতে আসেন। এসময় মিজানের ট্রিটমেন্ট শীটে কিছু ওষুধ লিখে দেন। জরুরি ভিত্তিতে এগুলো খাওয়ানোর আদেশ দেন। এসময় ঐ ওয়ার্ডে কর্তব্যরত দুইজন মহিলা ইন্টার্ন চিকিৎসক আপত্তি জানান। এগুলো অপ্রয়োজনীয় জীবন বিধ্বংসী ওষুধ বলেও তারা প্রতিবাদ করেন। তখন আগন্তুক ঐ ইন্টার্ন চিকিৎসক তাদের ধমক দিয়ে তার কথা শুনতে বলেন। তিনি নিজেকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নেতা বলে পরিচয় দেন।

এই প্রতিবেদক খোঁজ নিয়ে জানেন, আগন্তুক ঐ ইন্টার্ন চিকিৎসক এর নাম আল মামুন। তিনি গাইনী ওয়ার্ডে কর্মরত। গাইনী ওয়ার্ডের কর্তব্যরত চিকিৎসক নিউরো বিভাগীয় ওয়ার্ডে গিয়ে সেবা কার্যক্রমের কোন বিধান নেই। এ ঘটনায় খোদ চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

সন্ধ্যায় ইন্টার্ন চিকিৎসক আল মামুনের বক্তব্য জানতে এ প্রতিবেদক তার কাছে গেলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জেনে সটকে পড়েন। চিকিৎসাধীন মিজান এ বিষয়ে গণমাধ্যমে কোন কথা বলতে রাজি হননি। সচেতন মহল বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বলেছেন বিষয়টি দ্রুত খতিয়ে দেখা দরকার। সংশ্লিষ্ট চক্রান্তকারীদের আইনের আওতায় আনার দাবী জানান তারা।

উল্লেখ্য, গত বুধবার দিবাগত রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে ব্যক্তিগত ঘটনায় হামলার শিকার হন তালামিযে ইসলাম এমসি কলেজ শাখার সহ তথ্য প্রযুক্তি সম্পাদক মিজানুর রহমান। এক তরুণীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে। আবার আহত মিজানের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ রয়েছে তিনি যদিও তালামিয করেন কিন্তু সকল গোপন তথ্য সরবরাহ করেন ছাত্রলীগের কাছে।

মিজানের অনৈতিক ঘটনাকে আড়াল করতে দায় চাপায় ছাত্রশিবিরের ওপর। এ ঘটনায় জোরালো প্রলেপ দেয় ছাত্রদলের একটা অংশ। কুয়েট এর ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের একটা নির্দেশনাও আসে সিলেটে। তবে সিলেট ছাত্রদলের দায়িত্বশীল অংশ মিথ্যাচারের রাজনীতিতে এগুতে আগ্রহী হননি।

ঘটনার পরপর এমসি কলেজ অধ্যক্ষ ও শিক্ষকমন্ডলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। আহত শিক্ষার্থীকে গিয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে দেখে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ঘটনায় এই মারামারি হয়। আহত শিক্ষার্থীর অবস্থা গুরুতর নয়। কলেজের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে প্রধান করে ঘটনার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দেবার কথা রয়েছে।

এ ঘটনায় ওসমানী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পক্ষে ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী গণমাধ্যমে জানান, মিজানের হাত কিছুটা ফুলে গিয়েছিল, তবে এক্স-রেতে কোনো ভাঙা ধরা পড়েনি। তিনি আরও বলেন, পায়ের রগ কাটার মতো কোনো চিহ্ন আমার চিকিৎসকরা পাননি। রগ কাটার মত বড় ইস্যু নিয়ে কোনো বক্তব্যও আমাদের চিকিৎসকরা দেননি। মিজানের যে পায়ে আঘাত লেগেছে, সেটির যথাযথ চিকিৎসা করা হয়েছে। যদিও সেটি খুব গুরুতর নয়।

এ প্রসঙ্গে ছাত্রশিবিরের এমসি কলেজ সভাপতি ইসমাঈল খান বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে ছাত্রশিবিরের কোনো নেতাকর্মীরা জড়িত নন। ছাত্রশিবিরের জনপ্রিয়তা নষ্ট করতে তৃতীয় একটি পক্ষ কলকাঠি নাড়াচ্ছে। মূলত কলেজ ছাত্রাবাসে মিজানুর রহমান নামের ওই শিক্ষার্থী ও একই কলেজের জাকিরুল ইসলাম নামের অন্য একজন শিক্ষার্থী নিজেদের মধ্যে মারামারি করেছেন। এতে দুজনই আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।