ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী বা ওজোপাডিকোতে প্রি-পেইড মিটার এখন গ্রাহকদের গলার কাঁটা হয়ে দাড়িয়েছে। প্রায় কোটি টাকার বোঝা এখন তাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। ২০১৪ সালে খুলনায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপনকে কেন্দ্র করে গ্রাহকদের মধ্যে দেখা দিয়েছিল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। প্রি-পেইডের নামে গ্রাহকদের অর্থ লোপাট হতে পারে এমন আশংকাও করেছিল তারা। এজন্য প্রথমে বাঁধা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সকল বাঁধা উপেক্ষা করে খুলনায় প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়। অনেকে মিটার সংযোগ নিয়েও বছরের পর বছর ব্যবহার না করায় হিসাবে যোগ হচ্ছে মিটার ভাড়া ও ডিমান্ড চার্জ। ফ্রি মিটার দেওয়ার কথা বলে এখন ভাড়া যুক্ত করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রাহকরাও। পক্ষান্তরে মাইকিং করে ও প্রচারণা চালিয়ে ওজোপাডিকো কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিনের মিটার ভাড়া ও ডিমান্ড চার্জ রিচার্জ করার তাগিদ দিচ্ছেন।

ওজোপাডিকোর কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক গ্রাহক হয়তো মনে করছেন প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ না করলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু ছয়মাস বা এক বছর পর যখন রিচার্জ করা হবে তখনই দেখা দিবে বিপত্তি। একসাথে ওই ছয়মাস বা এক বছরের মিটার ভাড়া ও ডিমান্ড চার্জ অটোমেটিক কেটে নেবে ওজোপাডিকো। এজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের পরামর্শ হচ্ছে, ব্যবহার না করলেও অন্তত: প্রতি মাসে মিটার ভাড়া ও ডিমান্ড চার্জ বাবদ টাকা রিচার্জ করতে হবে। তা’ না হলে একসাথে গ্রাহকদের ওপর চাপ পড়বে।

ওজোপাডিকোর সূত্রটি বলছে, বর্তমানে খুলনা সার্কেলের আওতাধীন সাতটি বিতরণ বিভাগের সাড়ে নয় হাজারেরও বেশি গ্রাহক রয়েছেন যারা ছয় মাসের অধিক সময় প্রি-পেইড মিটার রিচার্জ করেন না। এমনিভাবে এক বছরের বেশি সময় ধরে রিচার্জ করেন না এমন গ্রাহক সংখ্যা পাঁচ হাজার ৭৪৩, দু’বছরের বেশি রিচার্জ করেন না তিন হাজার ৩৬১, তিন বছরের বেশি রিচার্জ করেন না দু’হাজার ২৬৩ গ্রাহক এবং পাঁচ বছরের বেশি রিচার্জ না করা গ্রাহক সংখ্যা ৯৬৪জন। এ হিসাব গত মার্চ মাস পর্যন্ত।

এর মধ্যে অধিকাংশই আবাসিক গ্রাহক এমনটি উল্লেখ করে ওজোপাডিকোর খুলনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হক বলেন, মূলত: সিঙ্গেল ফেজ ও থ্রি ফেজ মিটার হিসেবেই গ্রাহকদের চিহ্নিত করা হয়। সিঙ্গেল ফেজ মিটারের মধ্যে শতকরা ৯৫ ভাগই আবাসিক এবং বাকী পাঁচ ভাগ বাণিজ্যিক গ্রাহক। আর থ্রি ফেজ মিটারের বেশিরভাগ ক্ষুদ্র শিল্প বা বৃহৎ কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। সিঙ্গেল ফেজ মিটারের গ্রাহকদের মধ্যে কমপক্ষে দু’কিলোওয়াট ব্যবহারকারীর সংখ্যাই বেশি। সে হিসাবে দু’কিলোওয়াট ব্যবহারকারী গ্রাহকের প্রতি মাসের ডিমান্ড চার্জ ৮৪ টাকা আর মিটার ভাড়া ৪০ টাকা। অর্থাৎ একজন সর্বনিম্ন ব্যবহারকারী গ্রাহকের ক্ষেত্রে প্রতি মাসে বিদ্যুৎ ব্যবহার হোক বা না হোক ১২৪ টাকা রিচার্জ করতেই হবে। তা না হলে প্রতি মাসে ওই টাকা মিটারে যুক্ত হতে থাকবে।

ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহাম্মদ হায়দার আলী বলেন, গ্রাহক যদি নিজে মিটার কিনে দেন তার জন্য মিটার ভাড়া নেওয়া হয়না। কিন্তু প্রকল্প থেকে ফ্রি যেসব মিটার দেওয়া হয়েছে সেগুলোর জন্য ভাড়া দিতে হবে। মিটার ভাড়া কতদিন নেওয়া হবে এমন কোন নির্দিষ্ট সময় আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যেহেতু মিটার নষ্ট হলে কোম্পানিই পুন:স্থাপন করে দেবে সেহেতু আজীবনই ভাড়া পরিশোধ করবেন গ্রাহক।