নীলফামারী সংবাদদাতা : ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি আবারও বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে গত ৩ আগস্ট তিস্তার পানি এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান মঙ্গলবার রাত থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে। সকাল ৬টায তিস্তার পানি ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েটে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ২২ সেন্টিমিটার, ৯ টায় ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার এবং বিকেল ৩ টায় ৫২ দশমিক ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এই পয়েন্টে বিপৎসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। এদিকে পানির গতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই,পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ১৫টি চরসহ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। ওই সব গ্রামের মানুষজন রাতে তিস্তার পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন।

ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) হাফিজুর রহমান জানান তিস্তার পানি বেড়ে যাওয়ায় এই ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে।

টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নপরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানান খগাখড়িবাড়ী বাইশপুকুর গ্রামটিতে বানের পানি প্রবেশ করতে শুরু করায় ওই গ্রামের মানুষজনের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি গতকাল সকাল থেকে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুপুরের পর পানি কমতে শুরু করে। পানির গতি নিয়ন্ত্রণে ব্যারেজের সবক’টি জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।

লালমনিরহাট সংবাদদাতা : টানা বৃষ্টি ও উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। এতে লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা, লালমনিরহাট সদর ও পাটগ্রাম উপজেলার নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে তিস্তার বাম তীরবর্তী নি¤œাঞ্চল তৃতীয় দফায় পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবে গেছে শতাধিক গ্রামের রাস্তা-ঘাট, বসতভিটা, ফসলি জমি, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার ১৩ আগষ্ট , দুপুর ৩ টা পর্যন্ত, তিস্তা নদীঃ ১। ডালিয়া পয়েন্ট - পানির সমতল ৫২.১৯ মিটার, (বিপদসীমা = ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৪ সে.মি উপরে।

২। কাউনিয়া পয়েন্ট-পানির সমতল ২৯.০৫ মিটার, (বিপদসীমা = ২৯.৩০ মিটার) যা বিপদসীমার ২৫ সে.মি নিচে।

ধরলা নদীঃ ১। শিমুলবাড়ি পয়েন্ট- পানি সমতল ৩০.৪৩ মিটার, (বিপদসীমা = ৩০.৮৭ মিটার) যা বিপদসীমার ৪৪ সে.মি নিচে।

২। পাটগ্রাম পয়েন্ট - পানি সমতল ৫৭.৫২ মিটার, (বিপদসীমা = ৬০.৩৫ মিটার) যা বিপদসীমা ২৮৩ সে.মি নিচে।

নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী ও নোহালী, আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা।

মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। মহিষখোচা ইউনিয়নের আব্দুল হালিম বলেন, ‘গতকাল ও পরশু দিন থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এরপর পানি বাড়তে থাকে। গরু-ছাগল নিয়ে বিপাকে পড়েছি। এখনো কোনো জনপ্রতিনিধি বা সরকারি কর্মকর্তা খোঁজ নেননি।’

গোবর্ধনের মজলুম হোসেন জানান, ‘সারারাত পানি ঢুকেছে ধীরে ধীরে। রান্নাবান্না বন্ধ। বাচ্চারা স্কুলেও যেতে পারছে না। কেউ দেখতে আসছে না।’

গোবর্ধনের বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর পানি বেড়ে চরাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট তলিয়ে গেছে। আকাশের পানি আর নদীর পানি এক হয়ে গেছে। মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে।’

ডাউয়াবাড়ীর কৃষক হামিদুর রহমান বলেন, ‘নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। ফসলি জমি ও পশুপাখি নিয়ে বিপাকে পড়েছি। প্রশাসনের দ্রুত সহায়তা প্রয়োজন।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, ‘পানি বৃদ্ধির কারণে নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে।’

ডালিয়া ডিভিশনের উপসহকারী প্রকৌশলী তহিদুল ইসলাম জানান, ‘সন্ধ্যার মধ্যে পানি আরও বাড়তে পারে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দেওয়া হয়েছে।