শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার জ্বালানি সাশ্রয়ী, পরিবেশ বান্ধব ও এক সময়ের জনপ্রিয় পানি সেচের কৃষিযন্ত্র ‘জাঁত’ এখন আর চোখেই পড়ে না। অথচ ৩/৪ দশক আগেও এই কাঠের তৈরি যন্ত্রটি জেলার নিম্নাঞ্চলের প্রতিটি বাড়িতে শোভা পেতো। কালের বিবর্তনে অত্যাধুনিক সেচ মেশিনের সুইচ টিপলেই যেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি বেরিয়ে আসে-সেখানে কষ্ট করে কে আর পিঠালি, আম আর জাম গাছের জাঁত দিয়ে ডুবা-বিল পুকুর, নদী থেকে পানি সেচ দিবে। শুধু প্রান্তিক কৃষকরাই নয়, পানি সংকট মোকাবেলায় ধনী কৃষকরাও জাঁত দিয়ে জমির খেতে পানি সেচ দিতেন। এতে শ্রমিক বেশি লাগলেও খরচ বাঁচতো বর্তমানের তুলনায় অনেক কম। পিঠালি, আম ও জাম কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো জ্বালানি সাশ্রয়ী সেচযন্ত্র জাঁত। এর এক মুখবন্ধ আরেক মুখ খোলা থাকতো। একটি লম্বা গজারি এবং কুল গাছের কাঠের মাঝখানে গর্ত করে এক পাশে বাঁশের খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হয়। শরীর ওজন দিয়ে জাঁতের এক পাশে পানিতে ডুবিয়ে পানি ভরে উচু করলেই পাথর, ইট কিংবা কাঠের গুরি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। অপর পাশ দিয়ে জমিতে পানি পড়ে।

গোমস্তাপুর উপজেলার বয়োবৃদ্ধ একজন কৃষক আব্দুল্লাহ এ প্রতিবেদকে জানান, জাঁতের সুবিধা হলো নদীর তীরে কিংবা পুকুর, বিল ও ডোবার ধারে খুব সহজেই পানি উত্তোলন করা যায়। শক্তি লাগে কম। কম খরচে বেশি পানি উত্তোলন করা যায়। এটি কাঁধে করে দু’জন মিলে সহজেই পরিবহন করা যায় এবং খরচও কম। আদর্শ কৃষক মুকুল জানান, শ্যালো মেশিন, মটর ও পাওয়ার পাম্প আসায় কাঠের তৈরি এ যন্ত্রের জায়গা হয়েছে যাদু ঘরে। এখনকার ছেলে-মেয়েদের জাঁত দেখতে হলে যাদু ঘরে যেতে হবে। তবে জেলার বিভিন্ন উপজেলা বিলাঞ্চলের কাছাকাছি অনেক পুরোনো কৃষকের বাড়িতে খোঁজ নিলে জাঁত দেখা যায়।