বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে জেলায় তিনটি সংসদীয় আসন করে নির্বাচনী সীমানার চূড়ান্ত প্রজ্ঞাপন জারির প্রতিবাদ এবং চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে বাগেরহাট জেলা সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি। সাংবাদিক সম্মেলন থেকে হরতাল, অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিলসহ সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়। রোববার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতৃবৃন্দ।

এসময়, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সম্মিলিত কমিটির কো-কনভেনর এম,এ সালাম, সম্মিলিত কমিটির অপর কো-কনভেনর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা রেজাউল করিম, সম্মিলিত কমিটির সদস্য সচিব ও জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি শেখ মোহাম্মদ ইউনুস, বিএনপি নেতা শেখ মুজিবুর রহমান, ব্যারিস্টার জাকির হোসেন, খাদেম নিয়ামুল নাসির আলাপ, খান মনিরুল ইসলাম. মনিরুল ইসলাম ফরাজি, ফকির তারিকুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম গোরা, নাসির আহমেদ মালেক, জামায়াত নেতা মঞ্জুরুল হক রাহাদ সহ সর্বদলীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী, রোববার বিকেলে জেলার সকল উপজেলা ও তিন পৌরসভায় বিক্ষোভ, সোমবার (০৮ সেপ্টেম্বর) সকাল -সন্ধ্যা হরতাল, ০৯ তারিখ বিক্ষোভ মিছিল, ১০-১১ তারিখ আবারও ৪৮ ঘন্টার হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। তবে অ্যাম্বুলেন্স, শিক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়ি ও জরুরি সেবার যানবাহন সমূহ হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।

উল্লেখ্য যে, দীর্ঘদিন ধরে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন ছিল। গেল ৩০ জুলাই আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাটের চারটি আসনের মধ্যে একটি অংশ কমিয়ে জেলায় তিনটি আসন করার প্রাথমিক প্রস্তাব দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এরপর থেকেই বাগেরহাটবাসী আন্দোলন শুরু করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন বাগেরহাটের নেতাকর্মীরা। তার বিপরীতে গেল ০৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন শুধু সীমানা পরিবর্তন করে তিনটি আসনই জারি রেখে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে। নির্বাচন কমিশনের এই আসন বিন্যাস গণমানুষের দাবিকে উপেক্ষা করেছে বলে জানান বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা।

জেলা জামায়েতের আমির মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, আমাদের কান্নার শব্দটি নির্বাচন কমিশনের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এরপরেও যদি নির্বাচন কমিশনের বোধদয় না হয়, তাহলে পরবর্তীতে আরও কঠোর কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার ঘোষণা দেন তিনি।

বাগেরহাট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম বলেন, চারটি আসন ফিরিয়ে আনার জন্য আমরা আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি দ্রুত সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালতে যাবে। নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে হরতাল, অবরোধ, বিক্ষোভের পাশাপাশি স্বল্প সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালতে রিট করার ঘোষণা দেন তিনি।

প্রসঙ্গত নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত সীমানার প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বর্তমানে বাগেরহাট জেলার সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারিত হয়েছে : বাগেরহাট-১ (বাগেরহাট সদর-চিতলমারী-মোল্লাহাট)। বাগেরহাট-২ (কচুয়া-মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) ও বাগেরহাট-৩ (ফকিরহাট-রামপাল-মোংলা)। তবে ইতোপূর্বে ১৯৬৯ সাল থেকে বাগেরহাটে ৪টি আসনে নির্বাচন হয়ে আসছিল। তখনকার সীমানা ছিল: বাগেরহাট-১ (চিতলমারী-মোল্লাহাট-ফকিরহাট), বাগেরহাট-২ (বাগেরহাট সদর-কচুয়া), বাগেরহাট-৩ (রামপাল-মোংলা) বাগেরহাট-৪ (মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা)।