মোহাম্মাদ মনিরুজ্জামান, মোংলা : কোন ধরনের কীটনাশক বা রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই সুন্দরবনের দুবলার চরে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে উচ্চমানের শুটকি মাছ। দেশের চাহিদা পূরণ করেই থেমে নেইÑরপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। ফলে শুটকি পল্লীতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। শিগগিরই শুরু হবে বাজারজাত কার্যক্রম। মংলা থেকে নদীপথে দুবলার চরের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। এর একদিকে বিস্তৃত সুন্দরবন, আর অন্যদিকে বিশাল বঙ্গোপসাগর। দুর্গম এই চরে প্রতি বছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় পাঁচ মাস অবস্থান করেন উপকূলীয় এলাকার শত শত জেলে। তারা সমুদ্র থেকে মাছ ধরে, কাঁটা বাছাই করে, পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে তৈরি করেন শুটকি।
জেলেদের ভাষায়, “জোয়ারের সময় জাল নিয়ে ট্রলারে সাগরে যাই। ভাটার সময় মাছ নিয়ে ঘাটে ফিরে আসি। তারপর সুন্দরভাবে মাছ পরিষ্কার করে নেটে ছেঁকে রোদে শুকিয়ে ফেলিÑএইভাবেই শুটকি তৈরি হয়।”
আরেক জেলে বলেন, “আমাদের এখানে একদম প্রাকৃতিকভাবে বাতাসে শুকানো হয়। কোনো প্রকার ওষুধ বা সংরক্ষণকারী রাসায়নিক ব্যবহার করা হয় না।”
দুবলার চরের জেলেরা এখন অনেক বেশি সচেতন বলে জানিয়েছেন বন বিভাগ কর্মকর্তারা। পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আমরা চাই সুন্দরবনের পরিবেশ যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। তাই শুটকি তৈরির ক্ষেত্রে কীটনাশক বা রাসায়নিক ব্যবহারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কেউ এমন কাজ করলে বন আইনের আওতায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
প্রতিবছর বঙ্গোপসাগর থেকে রূপচাঁদা, ছুরি, চিংড়ি, লইট্টা, কাইট্টা সহ অন্তত ১০০ প্রজাতির মাছ ধরে জেলেরা। এসব মাছ থেকেই উৎপাদিত হয় প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টন শুটকি। প্রাকৃতিকভাবে শুকানো ও মান বজায় রাখার কারণে দিন দিন বাড়ছে দুবলার চরের শুটকির জনপ্রিয়তা, দেশীয় বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারেও।