খুলনার সড়কে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সিএনজি-মাহেন্দ্রা। ট্রাফিক আইনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে ক্ষুদ্র এই যানবাহনগুলো ইচ্ছা স্বাধীনভাবে ট্রাফিক নিয়মবর্হিভূত চলাচল শুরু করেছে। একদিকে সড়কে উচ্চগতি, ইচ্ছা-স্বাধীন ওভারটেকিং ও খামখেয়ালী পার্কিংয়ের কারণে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে দূর্ঘটনার ঝুকিও বাড়ছে।
কেএমপি ট্রাফিক বিভাগ বলছে, খুলনা মহানগরীতে প্রতিনিয়ত যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। খুলনা সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা নিয়মিত কাজ করছে। সড়কে নিয়মবর্হিভূত চলাচলের ব্যাপারে মামলা ও জরিমানাসহ যানবাহন আটকও করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি পরিচ্ছন্ন নগরীর সড়কে যা যা থাকা প্রয়োজন তার অনেক কিছুই ঘাটতি আছে খুলনার সড়কে। বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে অনেকাংশই পথচারী চলাচলের জন্য নেই রাস্তা পাররে চিহ্ন বা জ্রেবাক্রেসিং, বা ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি। তাই অনেকটাই ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার করছে নগরবাসি। সেই সাথে বেড়ে চলা যানবহন, বেপরোয়া গাড়ি চালানো, নিয়ন্ত্রণহীন গতি, অদক্ষ গাড়িচালক কর্তৃক যানবহন চলনা আরো ঝুকি বাড়িয়ে তুলছে।
দেখা গেছে, খুলনা-দৌলতপুর রুটে প্রতিদিন শত শত সিএনজি মাহেন্দ্রা যাত্রী নিয়ে ছুটছে। কর্মব্যস্ত মানুষগুলো প্রতিদিনই এই রুটে ধরে কর্মস্থলে পৌছান এবং কর্মশেষে বাড়ীতে ফেরেন। সম্প্রতি খুলনার এই রুটটিতে বেপরোয়া হয়ে উঠছে সিএনজি-মাহেন্দ্রা। ট্রাফিক আইনকে বৃদ্ধাগুলি দেখিয়ে ক্ষুদ্র এই যানবাহনগুলো ইচ্ছা স্বাধীনভাবে ট্রাফিক নিয়মবর্হিভূত চলাচল শুরু করেছে। একদিকে সড়কে উচ্চগতি, ইচ্ছা-স্বাধীন ওভারটেকিং ও খামখেয়ালী পার্কিংয়ের কারণে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে দূর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন সচেতন ব্যক্তিবর্গ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সংবাদ কর্মী জানান, রোববার (২৭ এপ্রিল) রাত ৮ দিকে পত্রিকা অফিসে যাচ্ছিলাম। গোয়ালখালি মোড় অতিক্রম করা সময় পেছন থেকে একটি সিএনজি এসে চাপ দেয়। এতে একটুর জন্য বড় দূর্ঘটনা ঘটেনি। কি কারণে এমন করা হলো জানতে চাইলে, ওই সিএনজি চালক প্রতি উত্তরে জানান আপনাকে এতো হর্ণ দিচ্ছে কেন সাইড দিচ্ছেন না। ওই সিএনজির মধ্যে বসা যাত্রী সংবাদ কর্মীর সাথে এমনটি করার প্রতিবাদ করেন।
সেতু নামের মোটর সাইকেল চালক জানান, বর্তমানে সিএনজি-মাহেন্দ্রা ড্রাইভারদের সাথে কথা বলার সুযোগ নেয়। তারা এমন উচ্চগতি ও ইচ্ছামতো ওভারটেকিং করছেন বলার ভাষা নেই। এছাড়া ৬০/৭০ গতিতে চালানো গাড়ি হঠাৎ ইন্ট্রিকেটার দিয়ে দাড়িয়ে যায়, তখন পেছনে থাকা গাড়ি কিভাবে কন্ট্রোল করা সম্ভব। তাদের এই খামখেয়ালী গাড়ি চালানোর বিষয়ে ট্রাফিক বিভাগের বন্ধ করা উচিত। সড়কে এমনভাবে গাড়ি চালানোর ব্যাপারে জরিমানা করা উচিত বলে আমি মনে করি।
মাহেন্দ্রার আসা রফিকুল ইসলাম নামের এক যাত্রী জানান, খুলনা থেকে দৌলতপুরে আসার জন্য মাহেন্দ্রা-সিএনজি ছাড়া তেমন বিকল্প কি আছে। সত্যি কথা বলতে কি মাহেন্দ্রা-সিএনজিতে চলতে খুব ভয় লাগে। খুব জোরো চালায়। বাচ্চা কোলো ছিল, বার বার ড্রাইভারকে বলেছি, ভাই একটু আস্তে চালান না, তবুও তিনি তার নিয়মে গাড়ি চালিয়েছন। এমন গতিতে গাড়ি চালানো ঠিক নয়।
দৌলতপুর-খুলনা সিএনজি চালিত থ্রী-হুইলার ড্রাইভার্স ইউনিয়নের সভাপতি ইলিয়াজ মোল্লা জানান, উচ্চগতি, ওভারটেকিং ও যত্রতত্র পাকিং থেকে বিরত থাকার জন্য ড্রাইভারদের সব সময় বলা হচ্ছে। তারপরও যারা ট্রাফিক নিয়মনীতির বাইরে গাড়ি চালাচ্ছে তাদের ব্যাপারে আলাপ আলোচনা করে সাংগঠনিক নিয়মে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
খুলনা জেলা অটোরিক্সা-অটোটেক্সি-অটোটেম্পু শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) কালু মুন্সি জানান, সড়কে ট্রাফিক নিয়মনীতি মেনে সকল ড্রাইভারদের চলাচল করা উচিত। যে বিষয়ে অভিযোগ করা হয়েছে এ ব্যাপারে নেতৃবৃন্দদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিব।
নিরাপদ সড়ক চাই (নিচাস) খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান মুন্না জানান, যতগতি, ততক্ষতি এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নাই। খুলনার সড়ক ও মহাসড়কে ট্রাফিক নিয়মবর্হিভূত যে সকল যানবাহন চলাচল করছে, তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কেএমপির ট্রাফিক বিভাগকে আমরা বারবার অবগত করছি। সড়কে উচ্চগতি, ইচ্ছা-স্বাধীন ওভারটেকিং ও খামখেয়ালী পার্কিংয়ের কারণে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে বলে যে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে এ ব্যাপারে ট্রাফিক বিভাগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। এ ব্যাপারে কেএমপির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) সুদর্শন কুমার রায় জানান, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলাপ আলোচনা করেছি, ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে । সড়কে নিয়ম বর্হিভূত চলাচলের ব্যাপারে মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। পাশাপাশি আটকও অব্যাহত আছে।