রাজধানীর শাহ আলী থানাহাজতে যুবদল নেতা আসিফ সিকদারের মৃত্যুর ঘটনায় মিরপুরের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মাকসুদুর রহমান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম, মেজর মুদাব্বিরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার মৃত আসিফের মা স্বপ্না বেগম নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু নিবারণ আইনে এ মামলা করেন।
মামলায় আরও যাঁদের আসামি করা হয়েছে, তাঁরা হলেন মিরপুর জোনের অতিরিক্ত পুলিশ উপকমিশনার (এডিসি) জাকারিয়া, সহকারী পুলিশ কমিশনার এমদাদুল হক, শাহ আলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মতিউর রহমান, ক্যাপ্টেন তাম্মাম, সায়েন্স ল্যাব সেনাক্যাম্পের সিনিয়র অরেঞ্জ অফিসার সিরাজ, আবুল কালাম আজাদ লেলিন, পুলিশের সোর্স খলিল ও ফরিদ ওরফে সিএনজি ফরিদ।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি খুরশিদ মিয়া আলম, সাধারণ সম্পাদক মো. নজরুল ইসলাম, কার্যকরী কমিটির সদস্য শামসুজ্জামান দিপুসহ কমিটির সব সদস্য বাদীপক্ষে মামলার শুনানিতে গতকাল উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার একটি আদালতের বিশেষ সরকারি কৌসুঁলি (পিপি) ফরহাদ হোসেন নিয়ন বাদীর পক্ষে মামলার আরজি আদালতে দাখিল করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি নেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন বলে জানান বাদীপক্ষের আইনজীবী নজরুল ইসলাম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০ জুলাই রাত দেড়টার দিকে বাদীর শাহ আলী থানাধীন নিউ সি ব্লকের ১ নম্বর সেকশনের ২২ নম্বর রোডের ১১ নম্বর বাসায় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও সাদা পোশাক পরা পুলিশ প্রবেশ করে। বাসার বিভিন্ন জিনিস তছনছ করে তারা বাদীর ছেলে শাহ আলী থানার ৯৩ নম্বর ওয়ার্ডের যুবদলের সেক্রেটারি আসিফ সিকদারকে আটক করে। বাসার মধ্যেই আসিফের হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন শুরু করে তারা। মারধর করতে করতে রাত ৩টার দিকে তাঁকে থানায় নেয়া হয়। ফজরের নামাজের পর থানা থেকে বাদীর বাসায় ফোন আসে। ফোনে বলা হয়, আসিফ প্রস্রাব-পায়খানা করে তাঁর কাপড়চোপড় নষ্ট করে ফেলেছেন। তাঁর জামাকাপড় পরিবর্তন করা দরকার। বাদী ও তাঁর বাসার সবাই মিলে থানায় যান। নতুন কাপড়চোপড় দেন। কিন্তু ছেলেকে পুলিশ দেখতে দেয়নি। থানা থেকে বলা হয়, আসিফকে ‘ইলেকট্রিক শক’ দেয়া হয়েছে। বাদীকে থানা থেকে চলে যেতে বলা হয়। অন্যথায় তাঁদের ওপর গুলি চালানো হবে বলে হুমকি দেয় পুলিশ। বাদী তাঁর বাসার লোকজন নিয়ে ভয়ে থানা থেকে বাসায় চলে যান। দুপুর ১টার দিকে থানা থেকে ফোন করে জানানো হয়, আসিফ মারা গেছেন।
অভিযোগে আরও বলা হয়, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং পুলিশের সোর্স ও অন্যরা পরস্পর যোগসাজশে নির্মমভাবে হত্যা করার পর বাদী থানায় গেলে থানা থেকে লাশ নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া দাফন করার হুমকি দেওয়া হয়। পরে বাদী থানায় মামলা করতে গেলে থানা কর্তৃপক্ষ তা নেয়নি।