খুলনা ব্যুরো : আর কয়েকদিন পরেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুসলিম উম্মাহর অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব ঈদ-উল-আযহা। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পছন্দের পশু কুরবানি দিতে হাটে যাচ্ছেন অনেকেই। খুলনা মহানগরীর জোড়াগেটের হাট এখনো শুরু না হলেও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা উপজেলায় জমতে শুরু করেছে কুরবানির পশুর হাট। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে খুলনায় বাড়তে শুরু করেছে অপরাধমূলক কার্রক্রম। বেড়েছে জালিয়াত চক্রের সক্রিয়তা। দেশের বিভিন্ন স্থানের ন্যায় খুলনার হাট-বাজারগুলোতে জাল টাকা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে কয়েকটি চক্র। তবে এসকল অপরাধীকে গ্রেফতার করতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করছেন আইনশৃঙ্খলাবাহিনী কর্মকর্তা।

এ বছর রোযার ঈদে নতুন নোট ছাড়েনি বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে সংরক্ষিত নতুন ও পুরানো নোট দিয়েই সালামী বিনিময় হয়েছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবারের কুরবানির পশুর হাট ও ঈদ-বাজারের পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করা হবে। সেই সুযোগে প্রায় কোটি টাকার জাল নোট খুলনার বিভিন্ন বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা এঁটেছে চক্রটি।

সূত্রে জানা যায়, খুলনার প্রধান গরুর হাট জোড়াগেট, ফুলতলা-শাহাপুর গরুর হাট, চালনা পশুর হাটসহ বেশকয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান টার্গেট করে জালনোট ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছে চক্রটি। শুধু হাট নয়, খুলনার ঈদ মার্কেট ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাইকারী বাজারগুলোকে টার্গেট করেছে চক্রটি। খুলনা বড় বাজার, ডাকবাংলো মার্কেট, রেলওয়ে মার্কেটসহ পাইকারী ও খুচরা বাজারগুলোতে এসকল নোট ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

কুরবানির পশুর হাটকে কেন্দ্র করে জাল টাকা কারবারির মূলহোতা প্রলোভন দেখিয়ে জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন এজেন্ট তৈরি করে। সেই সকল এজেন্টগণ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন রি এজেন্টদের নিকট পৌঁছে দেয়। এসকল রি এজেন্টগণ প্রান্তিক পর্যায়ের বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও বেকার যুবকদের টার্গেট করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বসে এইসকল মাস্টারমাইন্ডেরা এজেন্টদের মাধ্যমে জাল টাকার কারবার নিয়ন্ত্রণ করে। তথ্য রয়েছে, ৫শ’ ও ১ হাজার টাকার জাল নোটগুলো বিক্রি হয় এক তৃতীয়াংশের ও কম দামে। এক লাখ টাকার জালনোট প্রান্তিক পর‌্যায়ের চক্রের সদস্য কিনছে মাত্র ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকায়।

খুলনা মহানগরীর বানরগাতি এলাকার মশিউর রহমান বলেন, সম্প্রতি একটি চক্র হুবহু নোটের মত জাল টাকা নিয়ে একলোক আমাকে বিভিন্ন লোভ লালসা দেয়। জাল টাকা নেয়ার উদ্দেশ্যে নগদ টাকা নিয়ে আমাকে ঢাকা যেতে বলে। ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আমি ঢাকা যাই। গিয়ে দেখি সব জাল নোটের কারবার। আমি টাকা ফেরত চাইলেও পাইনি।

টুটপাড়ার সুজল নামে এক ব্যক্তি জানান, এই চক্রের আনাগোনা বেশি বরিশাল ও ঢাকায়। বরিশালের বেশ কয়েকটি গোপন স্থানে অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে কোটি টাকার জাল নোট ছাপায়। মাত্র ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এক লাখ টাকার নোট কেনা যাবে। তিনি বলেন, টুটপাড়ার বাসীন্দা ইসহাক নামক এক ব্যাক্তি ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে আমাকে এক লক্ষ টাকা দিতে চায়। জাল নোটের ব্যাপারে ধারনা না থাকায় প্রথমে আমি এ ব্যাপারে রাজি হই। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে দেখি সম্পূর্ণটাই ভুয়া। এরপর থেকে প্রতারক ইছহাক কে পাওয়া যাচ্ছে না।

ঈদকে সামনে রেখে খুলনা জেলার প্রায় ৬টি জালনোট সিন্ডিকেট দলের সক্রিয়তার তথ্য পাওয়া গেছে। জানা যায়, বর্তমানে খুলনার বিভিন্ন হাট ও বাজারে এই চক্র ওৎ পেতে থাকে। এদের মূল টার্গেটে থাকে সরল মানুষেরা। তাদেরকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে কৌশলে আসল টাকা নিয়ে নকল জাল টাকা দিয়ে যায়। এ সকল জাল টাকা কারবারীদের সদস্যরা খুলনা মহানগরীর টুটপাড়া খালপাড়, বানরগাতি বাজার, নিরালা তাবলিগ মসজিদ মোড়, সাচিবুনিয়া বিশ্বরোড, দিঘলিয়া ও নিজখামারসহ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তাকারে রয়েছে বলে তথ্য পায়া গেছে।

গোপন সূত্রে জানা যায়, একই ব্যক্তি একাধিকবার গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে বের হয়ে আবারও জাল টাকার কারবারে তৎপরতা চালাচ্ছে এমন নজিরও আছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযানে জালনোট তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জামাদি ল্যাপটপ, প্রিন্টার, ডাইস, কাটার, কোটি কোটি টাকার সমপরিমাণ জালনোট প্রস্তুতের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল কাগজ, কালি, জলছাপ দেয়ার জব্দ করা হয়েছে। সম্প্রতি খুলনা লবণচরা থানা পুলিশের অভিযানে ৫ লাখ টাকার জালনোটসহ একজনকে আটক করা হয়েছে। সাতক্ষীরার কাটিয়া নামক এলাকায় জাল নোট তৈরির মেশিনসহ ২জনকে আটক করেছে সেনাবাহিনী।

খুলনা জোড়াগেটের হাটে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তায় জল নোট শনাক্তকারী যন্ত্রও বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। অতীতে গ্রেফতার হওয়ার পর জামিনে ছাড়া পেয়েছে এমন জালনোট তৈরির চক্রের সদস্যদের বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়াসহ নজরদারি করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে খুলনার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে জাল নোট সম্পর্কিত বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য মাইকিং করা হবে। কুরবানীর হাটে বুথ স্থাপন করা হবে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে চেকিং এর ব্যবস্থা থাকবে। অপরাধীদের ধরতে অভিযান অব্যহত থাকবে বলে জানিয়েছে কেএমপির উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) মো. আবু তারেক।