৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আদালতের উত্তপ্ত প্রাঙ্গন থেকে প্রতিদ্বন্দি দুই প্যানেলের প্রার্থীরা খুলনা প্রেসক্লাবে এসে প্রেস কনফারেন্স করেছেন। আজকের (সোমবার) মধ্যে ঘোষিত তফসিলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে বিকেল ৩টার পরে তারা নতুন অ্যাডহক কমিটি করবেন বলে আলটিমেটাম দিয়েছেন।
রোববার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে জামায়াত সমর্থিত বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল মনোনীত অ্যাডভোকেট মো. আবুল খায়ের-অ্যাডভোকেট শেখ জাকিরুল ইসলাম পরিষদের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিকেল ৫টায় প্রেস কনফারেন্স করেন স্বতন্ত্র আইনজীবীদের প্যানেল অ্যাডভোকেট বেগম আক্তার জাহান রুকু-অ্যাডভোকেট নিহিত কান্তি ঘোষ পরিষদের প্রার্থীরা।
উভয় পরিষদের অভিযোগ, ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পরে সমিতির সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম পরিষদের সব সদস্য পালিয়ে যায়। সে সময় সর্বসম্মতিতে বিএনপিপন্থী আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ হোসেন বাচ্চুকে আহবায়ক ও অ্যাডভোকেট নুরুল হাসান রুবাকে সদস্য সচিব করে ৫ সদস্যের আহবায়ক কমিটি গঠন হয়। প্রতি বছরের ৩০ নভেম্বর সমিতির বার্ষিক নির্বাচন ও নতুন বছরের প্রথম দিন দায়িত্ব গ্রহণের প্রথা রয়েছে। কিন্ত অ্যাডহক কমিটি নানা অজুহাতে ২০২৪ সালে নির্বাচন না দিয়ে সাধারণ সভায় তাদের মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়ে নেয়। এ বছর নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশন গঠন ও তফসিল ঘোষণা হয়। নমিনেশন পেপার বিক্রির নির্ধারিত দিন ৩০ অক্টোবর কোন মনোনয়নপত্র তারা বিক্রি করেনি। বলা হয় ক্লারিক্যাল মিসটেকের জন্য ফরম বিতরণ করা যাচ্ছেনা। রোববার পাওয়া যাবে। কিন্ত সকাল থেকে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র না পেয়ে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। এরইমধ্যে অ্যাডহক কমিটি দুপুর ২টায় সমিতি ভবনের ১ নং হলরুমে একটি জরুরী সাধারণ সভা দেখিয়ে আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন ও তারাই সমিতির কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
প্রেস কনফারেন্সে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাহ আলম বলেন, নির্বাচনে বিএনপি তাদের ভরাডুবি আচ করতে পেরে দূরভিসন্ধিমূলক ভাবে ভোট বানচাল করেছে। আমরা সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনকে সময় দিলাম। তারা ঘোষিত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থ হলে সাধারণ আইনজীবীদেরকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি নিতে বাধ্য হবো।
স্বতন্ত্র প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আক্তার জাহান রুকু তীব্র ক্ষোভের সাথে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা সাইফুল নির্বাচন দিয়ে সেখানে কারচুপি করতো। ক্ষমতার দখল নিতো। কিন্ত আজ বিএনপি ভোট না দিয়েই ক্ষমতা আকড়ে থাকতে চায়। আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানোর অর্থ, এর আগে জাতীয় নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। এরপর তারা ভোট ছাড়াই বারের দখল নিয়ে আয়ের কোটি কোটি টাকা লোপাট করবে। তিনি সোমবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে বলেন, এরপর তারা নতুন অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করতে বাধ্য হবেন।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, আমরা নির্বাচনের জন্য প্রস্তত ছিলাম। কিন্ত অ্যাডহক কমিটি সাধারণ সভার সিদ্ধান্তে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছে।
খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নুরুল হাসান রুবা জানান, নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর আমাদের লক্ষ্য ছিল। কিন্ত সমিতির সাধারণ সদস্যরা আশঙ্কা করছেন, ভোটের পরে পলাতক সাবেক সভাপতি সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর চার্জশিট ও বিচার প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত হবে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের অনেকে ভোটে জেতার জন্য সাইফুলের সাথে যোগাযোগ করে তাকে নিরাপত্তার আশ^াস দিচ্ছে। এ জন্য সাধারণ সদস্যরা তলবী সভা ডাকার জন্য চিঠি দেয়। সেই সভাতে সর্বসম্মতিতে নির্বাচন কিছু দিনের জন্য পেছানো হয়েছে।