ভূমিকম্প অথবা ঝড়ে ভবনের ক্ষয়ক্ষতি হলেই শুরু হয় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভাঙার তোড়জোড়। এরপর ভবন ভাঙতে কে অর্থ দিবে, তাই নিয়ে চিঠি চালাচালি। কিছুদিন পর সেই কার্যক্রমও ঝিমিয়ে যায়। গত ১৬ বছর ধরে খুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ কার্যক্রম এভাবেই ঘুরপাক খাচ্ছে।

গত শুক্রবার (২১ নভেম্বর) দেশে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। ওইদিন সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটের দিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এ ভূ-কম্পন অনুভূত হয়। মাঝারি মানের ওই ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত সারাদেশে ১১ জনের প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়াও ভূমিকম্পের সময় ভবন থেকে মাথায় ইট খসে পড়ে ও আতঙ্কে ভবন থেকে লাফিয়ে সারাদেশে অন্তত ৪ শতাধিক মানুষ আহত হন। এরপরই ফের খুলনার ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা অপসারণের আলোচনা শুরু হয়েছে। অবশ্য এনিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক এখনও হয়নি।

কেসিসি থেকে জানা গেছে, ২০১০ সালের ২৯ আগস্ট কেসিসির সাধারণ সভায় ২৬টি বাড়িকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন ৪টি বাড়ি আংশিক ও পূর্ণাঙ্গভাবে ভাঙা হয়েছে। বাকি ২২টি বাড়ির মালিক জেলা প্রশাসন। এর মধ্যে একটি ভবন ভাঙা হয়েছে। বাকি ২১টি ভবনের কিছু রং ও চুনকাম করে নতুনের মতো করা হয়েছে। ভবনগুলোতে এখনও মানুষ বসবাস করছে। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর আরও ৬টি বাড়িকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাড়ির ৩টি ভাঙা হয়েছে। বাকিগুলো ভাঙার কাজ চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণের লক্ষ্যে গঠিত কমিটির এক সদস্য জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের চারপাশে আরও অনেক ভবন রয়েছে। সতর্কতার সঙ্গে এসব ভাঙা প্রয়োজন। প্রতিটি ভবন ভাঙতে শ্রমিক খরচ হিসেবে বিপুল পরিমাণ অর্থও দরকার। প্রতিটি বৈঠকে কে এই অর্থের যোগান দিবে, এই নিয়ে ঠেলাঠেলি শুরু হয়। এজন্য পূর্ণাঙ্গ সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। এছাড়া কিছু ভবন নিয়ে মামলা চলছে। কিছু ভবনে সরকারি দলের ঘনিষ্ঠরা ইজারা নিয়েছে। তাদের তদবিরে কার্যক্রম ঝুলে যায়।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ কমিটির বর্তমান সদস্য সচিব ও কেসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা রহিমা সুলতানা বুশরা বলেন, “সর্বশেষ বৈঠকে ৬টি ভবন ভাঙার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেগুলোর কাজ শুরু হয়েছে। পুরাতন ভবনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে। এদিকে নগরীতে ভবন তৈরি নকশা অনুমোদন করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। তবে নগরীতে থাকা ৮০ ভাগ ভবনেরই কেডিএর অনুমোদন নেই।যেনতেনভাবে তৈরি এসব ভবন নিয়ে কোনো তৎপরতাও দেখা যায় না কেডিএর। এ ব্যাপারে কেডিএর অথরাইজড অফিসার জি এম মাসুদুর রহমান বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকা তৈরি করে কেসিসিতে জমা দেওয়া হয়েছে। ভাঙার কাজ এখন তাদের। তবে খুলনা নগরীতে উচু ভবনের সংখ্যা হাতেগোনা। এসব ভবন নির্মাণের সময় কঠোর তদারকি করা হয়েছে। এসব ভবন ধসে পড়ার ঝুঁকি কম।