৫৫তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে জামায়াতে ইসলামী যশোর জেলা শাখার উদ্যোগে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর ) সকালে শহরের জেলা পরিষদ মিলনায়তনে (বিডি হল) আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যাপক গোলাম রসুল।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক গোলাম রসুল বলেন, দেশ স্বাধীন হলেও জাতি এখনো প্রকৃত মুক্তির স্বাদ পায়নি। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেলেও দুর্নীতি, অপশাসন, হত্যা, নির্যাতন ও চাঁদাবাজির মতো সামাজিক ব্যাধি থেকে দেশ মুক্ত হতে পারেনি। তিনি বলেন, যে লক্ষ্য ও আদর্শ সামনে রেখে লাখো মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, বাস্তবতায় তা আজও পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত নেপথ্য এখনো উদ্ঘাটিত হয়নি। পরিকল্পিতভাবে দেশের শিক্ষক, লেখক, সাহিত্যিক ও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্র চালানো হয়েছিল। তিনি বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রকৃত রহস্য উন্মোচনের দাবি জানান।
জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে জেলা আমীর বলেন, জাতীয় ঐক্য ছাড়া কোনো জাতির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। জামায়াতে ইসলামী একটি ঐক্যবদ্ধ, স্বনির্ভর ও মর্যাদাশীল বাংলাদেশ গড়তে চায়, যেখানে দেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
তিনি বলেন, অতীতে দেশকে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক বিভক্তির মধ্যে রাখা হয়েছিল, যার ফলে উন্নতির চেয়ে ক্ষতিই হয়েছে বেশি।
বক্তারা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জাতি নতুন এক সম্ভাবনার পথে এগিয়েছে এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদ থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা আরও সুদৃঢ় হয়েছে। দেশবাসী এখন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে। একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠিত হলে দেশে গণতান্ত্রিক ধারার নতুন অভিযাত্রা সূচিত হবে বলে তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন যশোর-৩ আসনের জামায়াত মনোনীত এমপি প্রার্থী ভিপি আব্দুল কাদের, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন, অধ্যাপক গোলাম কুদ্দুস, মাওলানা রেজাউল করিম, প্রচার সেক্রেটারি শাহাবুদ্দিন বিশ্বাস, অফিস সেক্রেটারি নূর-ই আলী নূর মামুন, সদর উপজেলা জামায়াতের আমীর আশরাফ আলী এবং শহর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মাওলানা ইসমাইল হোসেন প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মনিরুল ইসলাম।
বক্তারা বলেন, মুক্তিকামী মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে। এখনো সমাজে দুর্নীতি, বৈষম্য ও চাঁদাবাজির প্রভাব স্পষ্ট। তারা অভিযোগ করেন, ভারতীয় আধিপত্যবাদ আবারও দেশকে গ্রাস করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে, যার অংশ হিসেবে শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
আলোচনা সভা শেষে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি দড়াটানা, গাড়িখানা, চৌরাস্তা ও মাইকপট্টি প্রদক্ষিণ করে যশোর আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়। র্যালিতে বিজয় দিবসের চেতনা ও জাতীয় অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয়।