নোয়াখালী থেকে বোরহান উদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়া: ২৫ ফেব্রুয়ারী (মঙ্গলবার), নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে ১১ বছর আগে ছাত্রলীগের গুলীতে নিহত তিন শিবিরকর্মীর মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার চরহাজারী, রামপুর ও চরকাঁকড়া ইউনিয়ন থেকে আদালতের নির্দেশে মৃতদেহগুলো তোলা হয়।

মৃতদেহ উত্তোলন কালে আব্দুল আজিজ রায়হান এর মাতা তাজিয়া বেগম এবং সাইফুল ইসলাম এর পিতা নুর ইসলাম মৃত সন্তানের কঙ্কাল সহ অক্ষত কাপড় উত্তোলনের হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে বিলাপ করে কান্না করেছিলেন। এ সময় উপস্থিত দর্শকদের চোখে বেদনার অশ্রুপাত হচ্ছিল।

নিহত শিবিরকর্মীরা হলেন, চরহাজারী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে আব্দুল আজিজ ওরফে রায়হান (১৮), রামপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নুর ইসলামের ছেলে সাইফুল ইসলাম (২০) ও চরকাঁকড়া ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল কালামের ছেলে সাইফুল বাবলু (২০)। তাদের মধ্যে সাইফুল বামনী ডিগ্রি কলেজের ও রায়হান বসুরহাট দাখিল মাদরাসার শিক্ষার্থী এবং শিবিরকর্মী ছিলেন। এছাড়া বাবলু পেশায় একজন রংমিস্ত্রি ও জামায়াতকর্মী ছিলেন।

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত চক্রবর্তী মৃতদেহ উত্তোলনে নেতৃত্ব দেন। এসময় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) মঈনুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশান্ত চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের নির্দেশে সকালে চর হাজারী থেকে রায়হান, দুপুর পৌনে ৩টার দিকে রামপুর থেকে সাইফুলের ও বিকেল সোয়া ৫টার দিকে চর কাঁকাড়ার বাবলুর মৃতদেহ তোলা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহগুলো ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

বসুরহাট পৌরসভা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোশাররফ হোসাইন বলেন, নিহতের স্বজন বাদি হয়ে ১১ বছর পর এ হত্যাকা-ের ঘটনায় মামলা করেছেন। আমরা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে খুনের আসামিদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি।

২০১৩ সালে ১৪ ডিসেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে বসুরহাট বাজারে বিক্ষোভ মিছিল হয়। কোম্পানীগঞ্জ শাখা জামায়াতে ইসলামীর এই বিক্ষোভ মিছিলে আড়াই থেকে তিন হাজার লোক সমবেত হন। জামায়াত নেতাদের নেতৃত্বে করা বিক্ষোভ মিছিলটিতে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাদের গুলীতে জামায়াত ও শিবিরের সাতজন নেতাকর্মী নিহত হন। তাদের মধ্যে তিনজনের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। বাকি চারজনের লাশ বিনা ময়নাতদন্তে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় সে সময় কোনো মামলা হয়নি।

গত ৫ আগস্টের পর এ ঘটনায় বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল কাদের মির্জা, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদল, সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুরুজ্জামানসহ ১১২ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করা হয় আদালতে। পরে আদালতের নির্দেশে কোম্পানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

মামলায় কোম্পানীগঞ্জ থানার সাবেক পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম, সাবেক উপ-পরিদর্শক সুধীর রঞ্জন বড়ুয়া, আবুল কালাম আজাদ, শিশির কুমার বিশ্বাস ও উক্যসিং মারমাসহ ১৯ পুলিশকেও আসামি করা হয়।

কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম বলেন, আদালতের নির্দেশে কবর থেকে জামায়াত-শিবিরের তিন কর্মীর মৃতদেহ উত্তোলন করা হয়। এর আগে গত ১০ ডিসেম্বর উপজেলার বসুরহাট পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নয়ন হাজী বাড়ির পারিবারিক কবরস্থান থেকে মতিউর রহমান সজীব (১৭) নামে আরও এক শিবির কর্মীর মৃতদেহ তোলা হয়েছিল।