বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত মানবিক বাংলাদেশ গড়তে জামায়াতে ইসলামের আমীর জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। জন আকাক্সক্ষা পূরণ ও দেশের স্বার্থে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে জামায়াতে ইসলামী প্রয়োজনে যেকোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ঐক্যে যেতে রাজি আছে। তিনি বলেন, দেশের আদর্শ ও মূল্যবোধকে যাতে কেউ ধ্বংস করতে না পারে সে জন্য দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা করে একটি বৃহত্তর ঐক্য গড়ে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরির কাজ চলছে। তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে ছাত্র-জনতার ত্যাগ ও কুরবানির বিনিময়ে অর্জিত সফলতা ধরে রখতে হলে ফ্যাসিবাদীদের বিচার ও সংস্কার ত্বরান্বিত করতে হবে। তাই ইতিবাচক ধারায় দেশের রাজনীতিকে নিয়ে যেতে সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা রাখতে হবে। সোমবার (১৬ জুন) বিকেলে ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে স্থানীয় উলা মাজিদিয়া ইসলামীয়া দাখিল মাদরাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত ঈদ সমাবেশে প্রধান অতিখির বক্তৃতায় তিনি এ সব কথা বলেন।

ডুমুরিয়া উপজেলা আমীর মাওলানা মুখতার হুসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস। সমাবেশে বক্তৃতা করেন উপজেলা নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান ও গাজী সাইফুল্লাহ, সেক্রেটারি মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, হিন্দু কমিটির ডুমুরিয়া উপজেলা সভাপতি কৃষ্ণ নন্দী, সাহস ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি আব্দুল হান্নান, হিন্দু কমিটির উপজেলা সেক্রেটারি দেব প্রসাদ, স্বদেশ হালদার, যুব বিভাগের সেক্রেটারি বি এম আলমগীর হোসাইন, ছাত্রশিবিরের দক্ষিণ শাখার সভাপতি আবু তাহের, আব্দুল হাকিম, কামরুজ্জামান, শহিদুল ইসলাম প্রমুখ। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মীসহ সাধারণ সম্পাদক সাব্কে এমপির এই সমাবেশ যোগ দেন। মুষলধারে বৃষ্টি হলেও মানুষ যে যার স্থানে থেকে নেতার বক্তব্য শোনেন।

সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, নির্বাচন সামনে আসলে রাজনীতিতে অনেক মেরুকরণ হয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। আমরা চাই দেশে আর কোনো ফ্যাসিবাদের জন্ম না হোক।

ফ্যাসিস্ট সরকারের বিচার সময়ের দাবি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ যেভাবে মানুষ হত্যা করেছে, তার বিচার এ সরকারের অধীনে হওয়া উচিত। দেশের সব সেক্টরে সংস্কার প্রয়োজন। তবে নির্বাচনের জন্য যেসব সংস্কার প্রয়োজন, সেসব সেক্টরে অবশ্যই সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় আরেকটি ফ্যাসিস্ট হাসিনা তৈরি হবে। সরকারের কাছে আমাদের কয়েকটি প্রস্তাব জানানো হয়েছিল স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে ক্ষমতা হস্তান্তর করা দরকার। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন করার দাবি জানানো হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়নের জন্য প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে দুটি সমস্যা বিদ্যমান ছিল- এক, ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্ববাদ কায়েম হয়েছিল। দুই, দিল্লির তাবেদারি করে হাসিনা দেশ চালিয়েছেন। আমাদের শীর্ষ নেতাদের হত্যা করে বিদেশি এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হয়েছে। সচেতন দেশবাসীর কাছে বলতে চাই, আমরা একটি স্বাধীন ভূখন্ড, একটি মানচিত্র পেয়েছি। কিন্তু স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, অর্থনীতি ও রাজনীতির নীতিকে হাসিনা ধূলিসাৎ করেছেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে কোনো বিরোধী দল যায়নি, ভোটকেন্দ্রে ভোটাররাও যায়নি। এমনকি এরশাদও নির্বাচনে যেতে চায়নি, ভারত তাকে জোর করে নির্বাচনে পাঠিয়েছে।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জামায়াতের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আনুগত্যের ক্ষেত্রে সংগঠনের অনেক অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে সংগঠনকে এগিয়ে নিতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অপরের প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ পোষণ করে মন্তব্য করা এই সংগঠনের ঐতিহ্য নয়। তাই আশা করি, সংগঠনের ইতিহাস ও ঐতিহ্য রক্ষার্থে সবাই কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করে সংগঠনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ঐক্যবদ্ধভাবে ঝাঁপিয়ে পড়বে। নিয়মতান্ত্রিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলে আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন, আল্লাহ আমাদের বিজয় দান করবেন, ইনশাআল্লাহ।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর বাসষ্ট্যান্ডে ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামী

আয়োজিত ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, দেশের মানুষ বিগত আওয়ামী দুঃশাসন দেখেছে, পুনরায় এদেশের মানুষ অনুরূপ আরও একটি দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায়না। অনেকেই জামায়াত ইসলামের বিরুদ্ধে নানা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। ওসব পুরোনো রেকর্ড আর মানুষ শুনতে চায়না। জমি দখল, চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজী কারা করছে তা জনগণ বুঝে গেছে।

তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়তে বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন সফরের কথানুযায়ী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচর হতে পারে। হাইকোর্টের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে নিবন্ধন ও দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ফিরে পেয়েছি। তাই আগামী নির্বাচনে দাঁড়িপাল্লা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টির জন্য এখনই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। দেশবাসী চায় একটি পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদকে বিদায় দিয়ে যখন একটি নতুন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাচ্ছি তখনই একটি চক্র নতুনরূপে আধিপত্যবাদ বিস্তারের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এমনকি একটি মহল অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে ইসলামী শক্তিকে আলাদা করা ষড়যন্ত্র করছে। বিগত আওয়ামী দুঃশাসনে ৪০টি মামলা, সাড়ে সাত বছর কারাজীবন এবং রিমান্ডের নামে অমানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। সংসদ সদস্য থাকাকালীন মৃণাল বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড নির্মূল করে করেছিলাম। জনগণ রাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো। ডুমুরিয়া -ফুলতলার উন্নয়ন করে মডেল করে গড়ে তোলার চেষ্টা কওে জনগণের যে ভালবাসা আমি পেয়েছি তাতে আগামী নির্বানে বিজয়ে শতভাগ নিশ্চিত হবে ইনশাআল্লাহ।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে আপনাদের দোয়া এবং সমর্থনে বিজয়ী হলে সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজী, দখলবাজী এবং দুনীতিমুক্ত এলাকা গড়ে তুলবো। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মানুষের একটি কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে যদি সৎ লোকের নেতৃত্ব নিয়ে আসা যায়, তাহলে দেশে সৎ নেত্বত্বে সুশাসন প্রতিষ্ঠা হবে।

ডুমুরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর মাওলানা মুখতার হুসাইনের সভাপতিত্বে এবং আটলিয়া ইউনিয়ন সেক্রেটারি মো. মঈন উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য ও খুলনা জেলা আমীর মাওলানা এমরান হুসাইন, সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সি মঈনুল ইসলাম ও অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, উপজেলা নায়েবে আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, গাজী মো. সাইফুল্লাহ, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, কৃষ্ণ নন্দী, অধ্যক্ষ দেব প্রসাদ বৈরাগী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মাওলানা বাহারুল ইসলাম, মাওলানা মতিউর রহমান, আমানুল্লাহ আল গালিব, মাহামুদুল হাসান তাজবীর, হুসাইন আদনান, রবিউল

ইসলাম বুলু, হাবিবুর রহমান, জাহাঙ্গীর হুসাইন, রুহুল আমীন, গোলাম মোর্তজা, আব্দুল মান্নান, হাফেজ আবু বকর সিদ্দিক, আতিয়ার রহমান বদিয়ার, মাহমুদ আলম, আমানুল্লাহ আমান প্রমুখ।

এর আগে সোমবার সকাল ৯টায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জামিয়া ইউনিয়ন মহিলা বিভাগের এক মহিলা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জামিরা ইউনিয়ন আমীর শরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস, বায়তুলমাল সেক্রেটারি হাফেজ আমিনুল ইসলাম, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য মাষ্টার শেখ সিরাজুল ইসলাম, জেলা যুব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মোস্তফা আল মুজাহিদ। ইউনিয়ন সেক্রেটারি মাস্টার মিজানুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন ফুলতলা উপজেলা আমীর অধ্যাপক আব্দুল আলীম মোল্যা, সেক্রেটারি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মাওলানা সাইফুল হাসান খাঁন, উপজেলা কর্মপরিষদ সদস্য ড. আজিজুল হক, মহিলা বিভাগের সেক্রেটারি রাশেদারা রাশু, জামিরা ইউনিয়ন সভানেত্রী লিনা পারভীন প্রমুখ। পরে সেক্রেটারি জেনারেল সদ্য প্রয়াত উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর ও জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সহ-সভাপতি আবুল হোসেন মোড়লের কবর জিয়ারত করেন ও পরিবারের সদস্যদের সাথে মতবিনিময় করেন ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।