পবিত্র ঈদ উল আযহাকে সামনে রেখে কুরবানির পশু মোটাতাজাকরণে ব্যস্ত সময় পার করছে খামারি ও কৃষকরা। এবার জেলার ৯টি উপজেলা ও মেট্রোতে কুরবানির পশুর মোট চাহিদা ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ২৮৫ টি। চাহিদার তুলনায় ৬ হাজার ৭ শত ৭৮টি পশু বেশি। কুরবানির চাহিদা পূরণে এই সংখ্যায় ঘাটতি হলেও আশেপাশে জেলা থেকে তা পূরণ হবে বলে আশা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্টরা।
খুলনা জেলায় গত কুরবানির ঈদে খামারি ও কৃষক পর্যায়ে কুরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত ছিল ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ২৭৮টি। বিপরীতে চাহিদা ছিল ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৪শত ৪৩টি। চাহিদা থেকে উদ্বৃত্ত ছিল ২১ হাজার ৮শত ৩৫টি। এবার ঈদে কুরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৬৩টি। বিপরীতে চাহিদা রয়েছে চাহিদা ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ২৮৫ টি। চাহিদা থেকে উদ্বৃত্ত আছে ৬ হাজার ৭শত ৭৮টি। গেল বছর কুরবানি থেকে পশুর চাহিদা ও প্রস্তুতকৃত পশুর সংখ্যা বেড়েছে, তবে উদ্বৃত্ত্বেও সংখ্যা বাড়েনি।
সূত্র বলছে, খামারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে এবার খুলনা জেলায় কুরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৬৩ টি পশু। এর মধ্যে ষাড় ৪২ হাজার ৩শত ৯৩ টি, বলদ ১২ হাজার ৪০টি, গাভী ১৪ হাজার ৫শত ৫টি, মহিশ ২শত ৪৬ টি, ছাগল ৭৯ হাজার ৫শত ৮৩ টি, ভেড়া ১৪ হাজার ২শত ২ টি, এবং অন্যান্য ৬২ টি।
খুলনা জেলার ৯টি উপজেলা ও মেট্রোতে কুরবানির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার ৬৩টি। উপজেলাগুলোতে মোট কুরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ফুলতলায় ছিল ৪ হাজার ১শত ২৮ টি, দিঘলিয়া ৭ হাজার ১শত ৪৩টি, তেরখাদায় ১২ হাজার ৮শত ৩৩টি, রূপসায় ৪ হাজার ৫শত ৩৫টি, দাকোপ ১১ হাজার ৭শত ২৫টি, কয়রা ১৮ হাজার ১শত ৩১টি, পাইকগাছায় ৬হাজার ৪শত ২৯টি, ডুমুরিয়া ৭৯ হাজার ৯শত ৫৪টি, বটিয়াঘাটা ১১ হাজার ৪শত ৫২টি এবং মেট্রোতে ৬ হাজার ৭শত ৩৩টি।
খুলনা জেলা প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩ সালে জেলার ৯টি উপজেলা ও মেট্রোতে কুরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত ছিল ১ লক্ষ ৫৬ হাজার ২ শত ৭৮টি। যা চাহিদার তুলনায় ২১ লক্ষ ৮শত ৩৫টি বেশি। কুরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ফুলতলায় ছিল ৩ হাজার ২শত ৬২ টি, দিঘলিয়া ৬ হাজার ৭শত ৫১টি, তেরখাদায় ১১ হাজার ৩শত ৩টি, রূপসায় ৭ হাজার ৭শত ৫টি, দাকোপ ৯ হাজার ৭শত ৩৯টি, কয়রা ১৫ হাজার ২শত ৫৩টি, পাইকগাছায় ৮হাজার ৪৬টি, ডুমুরিয়া ৭৫ হাজার ৯শত ২২টি, বটিয়াঘাটা ৯ হাজার ৮টি এবং মেট্রোতে ৯ হাজার ২শত ৮৯টি।
তবে গেল বারের থেকে উদ্বৃত্ত্ব¡ কম থাকার কারণ হিসেবে এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্টদের দাবি, তৎকালিন সরকার দলীয় অনেকের এ খাতে বিনিয়োগ ছিল। ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর বেশিরভাগ বিনিয়োগকারিই এলাকা ছাড়া। ফলে তাদের পরিচালিত খামারের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
এদিকে কুরবানিকে সামনে রেখে খামারি ও ক্রেতাদের মধ্যে গরুর মশাবাহিত ভাইরাস লাম্পি স্কিনি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের প্রতিবেদন অনুযায়ী রোগ অনুসন্ধানে ৬৭ শতাংশ গরুর নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। শংকর ও দেশীয় জাতের গরু এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এর প্রভাব ঈদ উল আজহার বাজারে পড়বে বলে আশঙ্কা খামারিদের।
ডুমুরিয়ার গুটুদিয়ার বিসমিল্লাহ্ এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার কামাল হোসেন সুজন বলেন, সুষম খাদ্য ও প্রাকৃতিক উপায়ে উৎকৃষ্টমানের বড় বড় ষাঁড় ও বলদ গরু লালন-পালন করা হয় এখানে। ফলে এর ব্যাপক চাহিদা আছে। আমাদের খামারে প্রায় ৬৭টি কুরবানিযোগ্য ষাঁড় আছে। আকার ভেদে যার দাম ৬০ হাজার থেকে ৬ লাখ টাকা পর্যন্ত।
বটিয়াঘাটার মেসার্স পূরবী এগ্রো ফার্মের ম্যানেজার মো. সিদ্দিক বলেন, আমাদের ফার্মে ২০টি কুরবানিযোগ্য গরু আছে। সর্বনিম্ন দেড় থেকে সর্বোচ্চ ১২ লাখ টাকার গরু আছে এ ফার্মে।
খুলনা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো.শরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছর কুুরবানির পশুর চাহিদানুযায়ী উদ্বৃত্ত্ব রয়েছে। গেল বছর এ রোগ প্রতিরোধে এল এস ডি ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসগুলোতে ১৬ মাত্রার ভ্যাকসিন ৪ শ’ টাকা দামে কিনতে হয়। এ বছরের শুরু থেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ প্রতিষেধক মজুদ নেই। তবুও আমরা খামারি ও কৃষকদের যে কোন ধরণের অসুবধিায় পরামর্শ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছি। তিনি আরও বলেন, আমরা খামারিদের পরামর্শ দিয়েছি স্টেরয়েড হরমোন ও কেমিক্যাল কেউ গবাদি পশুকে খাওয়াবেন না। পাশাপাশি অনেকে গবাদি পশুকে পোলট্রি ফিড বা বয়লার ফিড খাওয়ান যা করা যাবে না। গরুকে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান গরু যদি হাসিয়ে যায় তাহলে হিট স্টোকের সম্ভবনা থাকলে ২-৩ বার গোসল করানো যেতে পারে না। তা না হলে ১ বার গোসল করাবেন। খামারে হিট ওয়েভ বা গরম বাতাস কমাতে চারপাশে ও চালের ওপর পানি ছিটালে পরিবেশ ঠান্ডা থাকবে।