কিশোরগঞ্জ সংবাদদাতা : কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলসহ সারা জেলায় উৎসবের আমেজে পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ধানকাটা । হাওরের ধানের মাঠে কিষান-কিষানীর কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত হয়ে উঠেছে প্রতিটি জনপদ। দল বেঁধে ধান কাটছেন দাওয়াল হিসেবে পরিচিত হাজার হাজার কৃষি শ্রমিক। ধানকাটার জন্য সুদূর ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, শেরপর, জামালপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা থেকেও দরিদ্র কৃষিশ্রমিকেরা হাওরের বিভিন্ন উপজেলায় এসে অস্থায়ী ডেরা তুলে বসবাস করেন। মৌসুমের শেষে ধানকাটার পারিশ্রমিক হিসেবে এরাও পেয়ে থাকেন প্রচুর পরিমাণ ধান।
অন্যদিকে হাওরের খালি জায়গায় বা বাড়ির সম্মুখস্থ বিশাল চত্বরে ধানমাড়াই, ধান শুকানো ও শুকনো ধান ঝেড়ে গোলায় তোলার নান্দনিক আয়োজন শুরু হয়েছে। আবহাওয়া ভালো থাকায় এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে এ বছর কিশোরগঞ্জের ইটনা, অষ্টগ্রাম, মিঠামইন হাওরসহ নিকলী, বাজিতপুর, তাড়াইল, করিমগঞ্জ, কটিয়াদী এবং উজান এলাকার অন্যান্য উপজেলায়ও বোরোর বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এক দল শ্রমিক ধান কাটছেন, অন্যদিকে আরেক দল শ্রমিক ধানের বোঝা মাথায় করে এনে সড়কের পাশে স্তূপ করে রাখছেন। এখান থেকে ট্রাক, লরি, টমটম ও মহিষের গাড়ি দিয়ে ধান খলায় এনে মেশিন দিয়ে মাড়াই করছেন কেউ কেউ। জমির পাশেই ধান সেদ্ধ করছেন অনেক কিষানি। কেউ আবার রোদে ধান শুকানোর কাজে ব্যস্ত। বাজারে বিক্রি করতে বস্তায় ধান ভরছেন অনেকে। এক জন কৃষক জানান, পাঁচ কানি জমিতে চাষ করা ব্রি–২৮ ধান কাটার জন্য ২২ জন শ্রমিক নিয়োগ দিয়েছেন। একজন শ্রমিককে দৈনিক এক হাজার টাকা মজুরি দিয়ে এক হাজার টাকা মণের ধান কাটাতে হচ্ছে। ধানের দাম না বাড়লে কৃষক ক্ষতিগ্রস্হ হবে। এদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, ভেজা ধান কেনার পর তাদের শুকাতে হচ্ছে। তাই বর্তমানে ধানের দাম কম। এছাড়া মিল মালিকরা এখনও ধান কেনা শুরু না করায় কৃষকরা বাজারে ভালো দাম পাচ্ছেন না।
কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো: সাদিকুর রহমান বলেন, এবার জেলার ১৩ উপজেলায় বিভিন্ন জাতের ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার ১১৫ হেক্টর জমি। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৯১২ টন।