দেশের সবচেয়ে বড় ও বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ লাখ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে, যাদের শিক্ষা কার্যক্রমে জড়িত আছেন লক্ষাধিক শিক্ষক। অথচ এত বৃহৎ একটি প্রতিষ্ঠান সরাসরি কোনো সরকারি অর্থ সহায়তা পায় না— শুধুমাত্র এমপিওভুক্ত কলেজগুলোর জন্য সরকার থেকে বছরে শিক্ষার্থীপ্রতি মাত্র ৭৬৫ টাকা ব্যয় হয়, — এমন বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ এস এম আমানুল্লাহ।

তিনি বলেন, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রামসহ দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষার্থীর পেছনে সরকারের বার্ষিক ব্যয় দুই থেকে তিন লাখ টাকা। সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জন্য ব্যয় মাত্র ৭৬৫ টাকা, তাও বিশ্ববিদ্যালয় সরাসরি পায় না। প্রশ্নপত্রের খাতা দেখার জন্য যেখানে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ টাকা দেওয়া হয়, সেখানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে দেওয়া হয় মাত্র ৪৫ টাকা। এখন প্রশ্ন হলো— শিক্ষার মান উন্নয়নে আমি টাকা পাব কোথায়?

প্রফেসর আমানুল্লাহ আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি সামান্য বাড়ালেই সমালোচনা হয়, অথচ ২০১৫ সালের পর থেকে কোনো ফি বাড়ানো হয়নি। এক রীম কাগজের দাম এখন তিনগুণ বেড়েছে, কিন্তু খাতা দেখা, গবেষণা বা শিক্ষক বেতন-ভাতা— কোনোটিই বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বেসরকারি কলেজগুলোর জন্য সরকারের কোনো বাজেট নেই, তারা এমপিও ছাড়া আর কিছুই পায় না। ফলে শিক্ষার মান উন্নয়নে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে সরকারি সহায়তা বাড়ানো অত্যাবশ্যক।

তিনি জানান, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিবছর প্রায় ৭ লাখ শিক্ষার্থী স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন, কিন্তু দক্ষতার অভাবে তাদের অধিকাংশই বেকার থাকেন।

এ পরিস্থিতি পরিবর্তনে কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করতে সিলেবাস সংস্কারসহ স্নাতক সম্মানে ইংরেজি ও আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে অংশীদারিত্বের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, যা বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন অর্থায়ন।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে আয়োজিত “ইকোনমিক রিফরম সামিট ২০২৫-এর “ট্যাকলিং ইয়ুথ আনএমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড ড্রাইভিং স্কিল্ড মাইগ্রেশন শীর্ষক সেশনে প্রফেসর আমানুল্লাহ এসব কথা বলেন।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডিজবস ডটকমের প্রতিষ্ঠাতা ফাহিম মাসরুর। এতে অংশ নেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পলিসি অ্যাডভাইজার জিয়া হাসান, ব্রেইনের নির্বাহী পরিচালক ড. শফিকুর রহমান, বিল্ডনেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এবং বিএনপি মিডিয়া সেলের মাহমুদা হাবিবা।