এইচ এম হাসিবুল হাসান, ঘিওর (মানিকগঞ্জ) : ২১ আগস্ট মমানিকগঞ্জের পাটুরিয়ায় পন্টুনে ফেরি ভিড়ানোর সময় র্যাম্পের লোহার তার ছিঁড়ে যায়। ফলে পদ্মার স্রোতে ভেসে যায় পন্টুন। এ ঘটনায় ৪ নম্বর ঘাট দিয়ে ফেরি চলাচল বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)।
গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে ৪ নম্বর ঘাটের পন্টুনের র্যাম্প পানিতে ডুবে গেলে এই ঘাট দিয়ে ফেরিতে যানবাহন ওঠানামা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সংস্কার কাজ চলায় বেলা দেড়টা পর্যন্ত পাশের ৩ নম্বর ঘাটটিও বন্ধ রাখা হয়। ফলে পাটুরিয়া প্রান্তের ৫টি ফেরিঘাট পন্টুনের মধ্যে সচল রয়েছে মাত্র দুটি।
এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। প্রায়শই কোনো না কোনো ঘাটে সমস্যা দেখা দেওয়ায় এ রুটে চলাচলকারী যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহনের শ্রমিকরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পাটুরিয়া ঘাটে গিয়ে দেখা যায়, ফেরি পারের অপেক্ষায় দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে আছে দূরপাল্লার যাত্রীবাহী বাস- কোচ, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাসসহ পণ্যবাহী অসংখ্য যানবাহন। টার্মিনাল এলাকা ছাড়িয়ে অপেক্ষমান যানবাহনের সারি গড়িয়েছে মহাসড়কের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে। ঘাট এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ যানবাহনের সারি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।
পাটুরিয়া ৩ নম্বর ঘাটের কাছে ফেরি পারের অপেক্ষায় থাকা কুষ্টিয়াগামী দূরপাল্লার যাত্রীবাহী কোচের চালক মোশারফ হোসেন বলেন, “সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঘাটে এসেছি। এখন বেলা আড়াইটা বাজলেও ফেরি পার হওয়ার সুযোগ হয়নি। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় যাত্রীরা অস্থির হয়ে উঠছেন।”
টার্মিনাল এলাকায় অপেক্ষমাণ পণ্যবোঝাই ট্রাকচালক মিজানুর রহমান বলেন, “নারায়ণগঞ্জ থেকে ঝিনাইদহের উদ্দেশ্যে বুধবার রাতে এ ঘাটে এলেও ফেরি পার হওয়ার সুযোগ পাইনি। গাড়িতে থাকা মালামাল সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে না পারায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। অতিরিক্ত মাল বোঝাই গাড়ি ব্রিজ দিয়ে নেওয়া যায় না বলে আমরা এই রুট ব্যবহার করি। কিন্তু একেক দিন একেক ঘাট বন্ধ থাকে, যার কোনো স্থায়ী সমাধান নেই।”
পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া রুটে চলাচলরত ফেরি শাহ-পরানের মাস্টার ইনচার্জ মো. কামাল হোসেন বলেন, “নদীতে প্রবল স্রোতের বিপরীতে মূল চ্যানেলে ফেরি চলাচলে মারাত্মক বিঘœ ঘটছে। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এখন প্রতিটি ট্রিপে সময় লাগছে দ্বিগুণ। এতে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে যাওয়ায় ঘাট এলাকায় অপেক্ষমান যানবাহনের চাপ বাড়ছে।”
ফেরি সেক্টরের আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে এ বহরের ছোট-বড় ১৫টি ফেরির মধ্যে ১০টি অপারেশনে রয়েছে। এর মধ্যে আরিচা থেকে ধানসিঁড়ি ও শাহ-পরান নামের দুটি রো-রো ফেরি এ রুটে যুক্ত করা হয়েছে। আরিচা-কাজিরহাট রুটে এখান থেকে গৌরী এবং ধাওয়াপাড়া থেকে ক্যামেলিয়া নামের ফেরি দুটি সংযুক্ত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত ডিজিএম আব্দুস সালাম বলেন, “পদ্মায় তীব্র স্রোত ও ভাঙন পরিস্থিতি সামাল দিতে নিয়মিত মেরামত কাজ চলছে। তবে স্থায়ী সমাধান নির্ভর করছে নদী শাসন প্রকল্পের ওপর।”