ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবিএল) থেকে ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ এবং তার স্ত্রী ও ভাইবোনসহ ৩১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ে মামলাটি করেছেন।
মামলায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, তার স্ত্রী ও ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান রুকমীলা জামান (৪৬), ব্যাংকের পরিচালক আসিফুজ্জামান চৌধুরী (৪৬) ও বোন রোকসানা জামান চৌধুরী (৫৬) ছাড়াও ইউসিবিএল ব্যাংক ও আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তাদের আসামি করা হয়েছে।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপভূক্ত প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারিকে মালিক সাজিয়ে নাম সর্বস্ব ভিশন ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাগজ তৈরি করে গম, মটর, হলুদ, ছোলা আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন করা হয় ইউসিবিএল ব্যাংক চট্টগ্রামের পোর্ট শাখা থেকে। সে টাকা আরামিট গ্রুপের অপর কর্মচারিদের নামে সৃষ্ট আলফা ট্রেডার্স, ক্ল্যাসিক ট্রেডিং, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামে আলাদা চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে স্থানান্তর করা হয়। পরে ওই টাকা পাচার করা হয়। দ-বিধি ১৮৬০ এর ৪০৬/৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা ও মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের ২০১২ এর ৪(২)(৩) ধারায় মামলাটি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, আরামিট গ্রুপের প্রটোকল অফিসার ফরমান উল্লাহ চৌধুরীরকে ব্যবসায়ী সাজিয়ে মিথ্যা তথ্যে ভিশন ট্রেডিং নামে একটি প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স করা হয়। সেটি দিয়ে ২০১৯ সালের ১৩ অক্টোবর ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রামের পোর্ট শাখায় একটি চলতি হিসাব খোলা হয়। পরের বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি প্রতিষ্ঠানটি গম, হলুদ, ছোলা ও মটর আমদানির কথা বলে ১৮০ দিনের জন্য টাইম লোনের আবেদন করেন। ব্যাংকের কর্মকর্তারা গ্রাহকের ব্যবসা, মালিকানা, পণ্য, গুদাম, ব্যাংক পারর্পমনেন্স ইত্যাদির মিথ্যা তথ্যে সন্তোষজনক প্রতিবেদন দাখিল করে ১৮০ দিনের জন্য ওয়ার্কিং ক্যাপিটেল হিসেবে ২৫ কোটি টাকা ঋণের সুপারিশ করে তা ব্যাংকের কর্পোরেট ব্যাংকিং ডিভিশনে প্রেরণ করেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ইউসিবিএল ব্যাংকের করপোরেট ব্যাংকিং ডিভিশন ও ক্রেডিট রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন’র কর্মকর্তাগদের সমন্বয়ে গঠিত প্রধান কার্যালয়ের ক্রেডিট কমিটি ওই ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছিল। নেতিবাচকব প্রস্তাব থাকা সর্ত্ত্বেও ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই না করে ঋণ অনুমোদন করে। ঋণের টাকাগুলো নাম সর্বস্ব চারটি প্রতিষ্ঠান আলফা ট্রেডার্স, ক্লাসিক ট্রেডার্স, মডেল ট্রেডিং ও ইম্পেরিয়াল ট্রেডিং নামে চারটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসেবে পে অর্ডারের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়। পরে যা নগদে উত্তোলন করা হয়।
টাকা স্থানান্তর করা এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকরা আরামিট গ্রুপের কর্মচারি জানিয়ে মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়, এসব টাকা নগদে উত্তোলনের পর উত্তোলনকারী আরামিট গ্রুপের কর্মচারিরা পে অর্ডার, ভাউচারের মাধ্যমে ইউসিবিএল ব্যাংকের বহদ্দারহাট শাখায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের হিসেবে বিভিন্ন সময়ে প্রদান করেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন- ইউসিবিএল ব্যাংকের সাবেক পরিচালক বশির আহমেদ (৫৫), আফরোজা জামান (৪৮), সৈয়দ কামরুজ্জামান (৬১), মো. শাহ আলম (৬২), মো. জোনাইদ শফিক (৬৪), অপরূপ চৌধুরী (৬৫), তৌহিদ সিপার রফিকুজ্জামান (৬৬), ইউনুছ আহমদ (৭৯), হাজী আবু কালাম (৭৯), নুরুল ইসলাম চৌধুরী (৬২) এবং সাবেক চেয়ারম্যান এম এ সবুর (৭৭) ও সাবেক ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী (৬৪)। ব্যাংকটির সাবেক কর্মকর্তাদের মধ্যে আছেন- মোহাম্মদ একরাম উল্লাহ (৫১), আবদুল হামিদ চৌধুরী (৫০), আবদুর রউফ চৌধুরী, জিয়াউল করিম খান (৪৬), মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল (৫৮), মীর মেসবাহ উদ্দীন হোসাইন (৬২) ও বজল আহমেদ বাবুল (৫৬)।
জাবেদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আরামিট গ্রুপের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাদের আসামি করা হয়েছে, তারা হলেন- মোহাম্মদ ফরমান উল্লাহ চৌধুরী (৫১), কাজী মোহাম্মদ দিলদার আলম (৬৬), মোহাম্মদ মিছাবাহুল আলম (৫০), আব্দুল আজিজ (৩৯), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (৫৪), মেহাম্মদ হোছাইন চৌধুরী (৪৮), ইয়াছিনুর রহমান (৪৩), ইউছুফ চৌধুরী (৪৫) ও সাইফুল ইসলাম (৪৫)।
চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবুর ছেলে সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রাম-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি প্রথম মেয়াদে ভূমি প্রতিমন্ত্রী এবং পরের মেয়াদে এক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।