ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার মামলায় ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সারাদেশে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগের বিচারে গঠিত ট্রাইব্যুনাল কোনো মামলায় এই প্রথম সাজার রায় ঘোষণা করলো।
গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতা হারানোর পর প্রথম কোনো মামলায় শেখ হাসিনার সাজার রায় এলো। গত বছরের অক্টোবরে ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন বা নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এটিই ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়।
এ মামলার অন্য আসামী গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের ছাত্রলীগ নেতা শাকিল আকন্দ বুলবুল ওরফে মো. শাকিল আলমকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদ- দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
রায় ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এসব তথ্য জানিয়ে বলেছেন, আগের ট্রাইব্যুনালের হিসেব বাদ দিলে নতুন করে গঠন করা ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলায় প্রথম কোনো সাজার রায় ঘোষণা করা হয়েছে।
আদালতে গতকাল শেখ হাসিনা ও শাকিলের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। অ্যামিক্যাস কিউরি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামান। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর তানভীর জোহা।
ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করা, মামলার বাদী, সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানো ও হুমকি দেওয়ায় ট্রাইব্যুনাল আইনে এ সাজা দেওয়া হয়েছে বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।
চিফ প্রসিকিউটর জানিয়েছেন, তারা আদালতে আত্মসমর্পণের পর বা যেদিন গ্রেফতার হবেন, সেদিন থেকে এ সাজা কার্যকর হবে।
এদিকে এ রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রীয় খরচে নিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) অ্যাডভোকেট মো. আমির হোসেন। তিনি বলেন, প্রসিকিউশন থেকে আদালতে যে বক্তব্য রেখেছেন তার সঙ্গে আমার দ্বিমত রয়েছে। এই সাজার রায়ে আমি সন্তুষ্ট নই। সাজার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে ঘোষণা করা রায় দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
‘আমার বিরুদ্ধে ২২৭টি মামলা হয়েছে, তাই ২২৭ জনকে হত্যার লাইসেন্স পেয়ে গেছি’, অনলাইনে এমন একটি বক্তব্যের অডিও ছড়িয়ে পড়ে। পরে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ওই কথোপকথনের ফরেনসিক পরীক্ষা করে সত্যতা পায়। এরপরই অডিওর বক্তব্য শেখ হাসিনার উল্লেখ করে তিনি ও শাকিল আকন্দ বুলবুলের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ দাখিল করা হয় ট্রাইব্যুনালে।
গত ৩০ এপ্রিল আদালত অবমাননার এ অভিযোগ দাখিল করেন চিফ প্রসিকিউটর। ওইদিন ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গ্রহণ করে ১৫ মের মধ্যে অভিযুক্তদের জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কোনো জবাব দাখিল না করায় তাদের ২৫ মে ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপর এ মামলার বিচারের স্বচ্ছতার স্বার্থে গত ১৯ জুন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ ওয়াই মশিউজ্জামানকে অ্যামিক্যাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল।
প্রসিকিউশন জানায়, পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও শেখ হাসিনা নিজে উপস্থিত হননি কিংবা কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে ব্যাখ্যা দেননি।