মাস ছয়েক আগে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদল নেতা এস এম শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার ঘটনায় মাদক কারবারিদের দায় পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তিনি অভিযোগপত্রে বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাম্য ও তার বন্ধুরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বেচতে নিষেধ করায় মাদক কারবারিদের আক্রমণের শিকার হন।
তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক আখতার মোর্শেদ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, অভিযোগপত্রে সাত জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গাঁজা বিক্রি করতে নিষেধ করায় সাম্যকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়েছে।
গত ১৩ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ভেতর দিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় ছুরিকাঘাতে আহত হন সাম্য। রাত ১২টার দিকে রক্তাক্ত অবস্থায় বন্ধুরা সাম্যকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে এলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটে পড়তেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এই শিক্ষার্থী এ এফ রহমান হলের আবাসিক ছাত্র ছিলেন। একই হলে ছাত্রদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক ছিলেন তিনি। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে। এ ঘটনায় ১৪ মে সকালে নিহতের বড় ভাই শরীফুল ইসলাম শাহবাগ থানায় ১০ থেকে ১২ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন। সেদিন তিনজনকে গ্রেপ্তারের তথ্য দেয় পুলিশ।
মামলাটি তদন্ত করে গত বৃহস্পতিবার সাত মাদককারবারিকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে তদন্ত সংস্থা ডিবি পুলিশ। অভিযোগপত্রভুক্তরা হলেন, মেহেদী হাসান, মো. রাব্বি ওরফে কবুতর রাব্বি, মো. রিপন ওরফে আকাশ, নাহিদ হাসান পাপেল, মো. হৃদয় ইসলাম, মো. হারুন অর রশিদ সোহাগ ওরফে লম্বু সোহাগ ও মো. রবিন। আর তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তামিম হাওলাদার, সম্রাট মল্লিক, পলাশ সরদার ও সুজন সরকার নামের চারজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামী মেহেদী হাসান, রিপন, কবুতর রাব্বি, পাপেল, হৃদয়, রবিন, সোহাগরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে চিহ্নিত মাদক বিক্রেতা। দল নেতা মেহেদী হাসানের কাছ থেকে অন্যরা গাঁজা নিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মন্দির গেইট এলাকায় খুচরা বিক্রি করে আসছিল। গাঁজা বেচা শেষে সবাই মেহেদীর কাছে টাকা জমা দিতেন।
ঘটনার দিনের আগে আসামী রিপন ও রাব্বি গাঁজা বেচার টাকা মেহেদীকে ঠিকমত না দিয়ে বলেন, তাদের টাকা মাস্তানরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে। মেহেদী হাসান তার লোকজনদের বলে দেন, এমন পরিস্থিতি হলে সবাইকে একসঙ্গে প্রতিহত করতে হবে। তিনি কয়েকজনকে সুইচ গিয়ার (চাকু) ও ইলেকট্রিক ট্রেজারগান কিনে দেন। আর গাজা বেচতে মেহেদী, কবুতর রাব্বি, রিপনদের নিষেধ করেছিলেন সাম্য ও তার বন্ধুরা। এ কারণেই তাদের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি হয়।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, ঘটনার রাতে কবুতর রাব্বি মুক্তমঞ্চের কাছে গাঁজা বেচছিল। তার হাতে একটি ইলেকট্রিক ট্রেজারগান ছিল। অন্যদিনের মতোই কবুতর রাব্বির সঙ্গে পাপেল ও রিপন ছিল। একপর্যায়ে সাম্য দুই বন্ধুকে নিয়ে মোটরসাইকেলে মুক্তমঞ্চের দিকে আসেন। সেখানে কবুতর রাব্বিকে ইলেকট্রিক ট্রেজারগান হাতে দেখতে পেয়ে তাকে থামতে বলেন সাম্য। রাব্বি দৌড় দিলে সাম্য মোটরসাইকেলে করে ধাওয়া দিয়ে ৩০-৩৫ গজ দূরে গোলপুকুরের (পুরাতন ফোয়ারা) কাছে রাব্বিকে ধরে ফেলে। এসময় ছাত্রদল নেতা ইলেকট্রিক ট্রেজারগানটি নেওয়ার চেষ্টা করে। তখন রাব্বি ট্রেজারগানটি না দিলে তাকে চড়-থাপ্পর মারে সাম্য।