স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী ছাড়া পলাতক আসামীর পক্ষে কোনো ব্যক্তির কথা বলার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। বিচারে অনিয়ম ধরতে হলেও আসামীদের ট্রাইবুনালে হাজির হতে হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে লবিং প্রতিষ্ঠান নিয়োগ ও জাতিসংঘে অভিযোগ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম ঠিকভাবে পরিচালনা হচ্ছে না; জাতিসংঘে আওয়ামী লীগের অভিযোগ প্রসঙ্গে মিজানুল ইসলাম বলেন, কেন ঠিকভাবে পরিচালনা হচ্ছে না তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। কারণ এই আইনটা তৈরি করেছিলেন মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের পার্লামেন্ট। ওই সময় বিখ্যাত তিনজন আইনজীবী এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। তাদের একজন ড. কামাল হোসেন, আরেকজন মনোরঞ্জন। পরবর্তীকালে শফিক আহমেদ যখন আইনমন্ত্রী এবং আরেকজন আইনজীবী ছিলেন সরকারদলীয় আনিসুল হক। তারা এই আইনটা এমেন্ডমেন্ট (সংশোধন) করেছিলেন ও ২০১০ সালে এই ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেছিলেন। যদিও আইনটা ৭৩ সালের। তাদের তৈরি করা আইন এবং অনুপস্থিতিতে কিভাবে বিচার চলবে সেই প্রক্রিয়াটা তারাই তৈরি করেছে। সেই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে অনিয়ম কি হচ্ছে সেটা যদি ধরাতে হয় তাহলে আসামীকে উপস্থিত হতে হবে। উপস্থিত হয়ে আবেদন করে বলতে হবে যে এখানে এখানে এই অনিয়ম হচ্ছে। এ সময় আওয়ামী লীগের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজের একটি উদ্ধৃতি টানেন তিনি।
পলাতক আসামীপক্ষে কারও কথা বলার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধুমাত্র স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী ছাড়া পলাতক আসামীদের পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তির কোনো কথা বলার সুযোগ নেই। আর শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিযুক্ত করা হয়েছিল আমির হোসেনকে। আমি যতটুকু জানি তিনি শেখ হাসিনার আমলের কোনো একটা কোর্টের স্পেশাল পিপির দায়িত্বে ছিলেন। অর্থাৎ তিনি তারই লোক ছিলেন। কাজেই এখানে ভিন্ন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার কারণ নেই।
এই প্রসিকিউটর বলেন, স্টেট ডিফেন্সের কোনো অযোগ্যতা নেই। এরপরও যদি আইনজীবীর ব্যাপারে কোনো প্রশ্ন উত্থাপিত হয়, তাহলে যিনি প্রশ্ন উত্থাপন করবেন তাকে এ মামলার লোকাল স্ট্যান্ডে থাকতে হবে। অর্থাৎ এ মামলায় কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। পলাতক আসামীদেরও ট্রাইব্যুনালে আসতে হবে। আইনজীবী নিয়োগ করতে হবে। অথবা আইনজীবী নিয়োগ ছাড়া নিজেরাই বক্তব্য দেওয়ার অধিকার রাখেন তারা। তাই তারা হাজির হোক। হাজির হয়ে কথা বলুক।
তিনি বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রায় ঘিরে সরকারের বিরুদ্ধে প্রোপাগা-ার অংশ হিসেবে দেশজুড়ে নৈরাজ্যের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মকা- চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে এটিকে থ্রেড টু জাস্টিস মনে করি না। বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য তারা এমনটা করছে।
বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ে মিজানুল ইসলাম বলেন, আইনানুগভাবে বিচার কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এখন দেশে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে, দৃঢ়তার সঙ্গে এ ধরনের পদক্ষেপকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী রুখে দেবে বলে আমার বিশ্বাস।
বিদেশি গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হচ্ছে, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বিদেশি কোনো গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের ক্ষমতা আমাদের নেই। তবে কেন প্রচার করছে তা ওসব গণমাধ্যম ভালো জানে। তাদের উচিত এই প্রশ্ন করা যে, এই গণহত্যা সংঘটিত বা হত্যাকা-ের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; যেটা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করেছে এবং এনালাইসিস করেছে, এটা তারই কণ্ঠস্বর। কাজেই তাদের এই প্রশ্নগুলো করা উচিত। তাই যারা এই প্রোপাগা-া চালাচ্ছে তাদের এই জবাবটা দেওয়া উচিত।
এই প্রসিকিউটর বলেন, ট্রাইব্যুনাল-১ এ আজ বুধবার পাঁচটি মামলার দিন ধার্য ছিল। এর মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ছিল শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে সংঘটিত হত্যাকা-। দুটোতেই আমরা সময় চেয়েছি। আগামী বছরের ১২ জানুয়ারি আমাদের সময় মঞ্জুর করে প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করা হয়েছে। এছাড়া চানখারপুলে হত্যাকা-ের মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আমরা দুজন সাক্ষীর হাজিরা দিয়েছিলাম। একজন জব্দতালিকার সাক্ষী। তিনি তার সাক্ষ্য শেষ করেছেন। দ্বিতীয়জন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বা সর্বশেষ সাক্ষী। তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম জবানবন্দি শুরু করেছেন। আংশিক জবানবন্দি শেষে ডিফেন্সের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মুলতবি করেন ট্রাইব্যুনাল।
তিনি আরও বলেন, ট্রাইব্যুনাল-২ এ দুটি মামলার দিন ধার্য ছিল। এর মধ্যে আবু সাঈদ হত্যাকা-ে আমরা দুজন সাক্ষীর হাজিরা দিয়েছি। একজন সাক্ষী আশরাফুল ইসলামের জবানবন্দি শেষ হয়েছে। তার জেরা চলমান। আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর মামলাও ছিল। সেই মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু আমরা বিশেষ পরিস্থিতির কারণে সাক্ষী আনতে পারিনি বা আসেনি। এ কারণে সময় চেয়েছি। তবে এ মামলায় যে একজন ভুক্তভোগী যাকে আমরা প্রথমে শনাক্ত করতে পারিনি। তার নাম আবুল হোসেন। তার ডিএনএ টেস্ট করার পর পরিবারের সঙ্গে মিল পাওয়ায় লাশ উত্তোলন করে ফেরত দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি শুনানিতে তা মঞ্জুর হবে।