সাইবার সুরক্ষা আইনে করা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষিকা ও সহকারী প্রক্টর শেহরীন আমিন ভূঁইয়া মোনামির মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালত মামলার এজাহার গ্রহণ করে এ আদেশ দেন। আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এর আগে সোমবার শাহবাগ থানায় সাইবার সুরক্ষা আইনে মামলা করেন শিক্ষিকা মোনামি। সঙ্গে তাকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে করা কুরূচিপূর্ণ মন্তব্যের স্ক্রিনশটও পেশ করেন। মামলায় চারজনকে আসামী করা হয়। তারা হলেন- সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট মুজতবা খন্দকার, লেখক ও এক্টিভিস্ট মহিউদ্দিন মোহাম্মদ, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নিরব হোসাইন ও আশফাক হোসাইন ইভান।
মামলার এজাহারে বলা হয়, মামলার ১ নম্বর বিবাদী (আসামী) সাংবাদিক ও এক্টিভিস্ট মুজতবা খন্দকার, ২ নম্বর বিবাদী লেখক ও এক্টিভিস্ট মহিউদ্দিন মোহাম্মদ, ৩ নম্বর বিবাদী ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী নিরব হোসাইন ও ৪ নম্বর বিবাদী আশফাক হোসাইন ইভান। তাদের কুরূচিকর মন্তব্যের স্ক্রিনশট সংযুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। মামলার পর শিক্ষিকা মোনামী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা নেই, আমি একজন সাধারণ শিক্ষক। সেখানে আমাকে নিয়ে গত এক বছর ধরে এমন আচরণ করা হচ্ছে, যার কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না। মামলাটা একদম শেষ মুহূর্তে এসে করেছি।’
গত বছর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সময়ের আলোচনার কেন্দ্রে আসেন ঢাবি শিক্ষিকা মোনামী। সে সময় শাহবাগ থানার সামনে থেকে আন্দোলনত এক শিক্ষার্থীকে পুলিশ টেনেহিচড়ে ভ্যানে ওঠাতে গেলে তিনি ঢাল হয়ে সামনে দাঁড়ান। ওই শিক্ষার্থীকে একপ্রকার ছিনিয়ে নেন পুলিশের কাছ থেকে। ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ পেলে প্রশংসার বন্যায় ভাসেন শিক্ষিকা মোনামি। তারপর থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে নানাভাবে সমর্থন দিয়েছেন তিনি, রাজপথেও থেকেছেন। সবশেষ ডাকসু নির্বাচনের সময় ব্যাপক আলোচনায় আসেন শিক্ষিকা মোনামি। অভিযোগ ওঠে, নির্বাচনে তিনি শিবিরের প্যানেলকে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন, নানা ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছেন। সামাজিকমাধ্যমে অনেকে তাকে শিবিরের নেত্রীও আখ্যা দেন। এরপর সম্প্রতি আলোচিত এই ঢাবি শিক্ষিকার নানা আপত্তিকর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করা হয়, যেগুলো এআই প্রযুক্তি দিয়ে বানানো। সঙ্গে সেই ছবির নিচে নানা কুরূচিপূর্ণ মন্তব্য করতে থাকেন অনেকে। শেষমেশ তিনি মামলা করতে বাধ্য হন।
শেহরীন আমিন ভুইয়ার ওপর সাইবার আক্রমণের নিন্দা : বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকবৃন্দ বলেছেন, আমাদের সহকর্মী শেহরীন আমিন ভুইয়া ম্যাডাম-এর ছবিকে বিকৃত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার এবং অশালীন মন্তব্য করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানাই। এ ধরনের কর্মকাণ্ড একজন শিক্ষকের ব্যক্তিগত মর্যাদায় আঘাত এবং নারীসমাজের জন্য চরম অসম্মানজনক। আমরা মনে করি, ডিজিটাল মাধ্যমে হয়রানি, সাইবার বুলিং ও যৌন নিপীড়নের যেকোনো রূপের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি।
গতকাল মঙ্গলবার দেয়া বিবৃতিতে তারা এ কথা বলেন। তারা বলেন, আমরা শেহরীন আমিন ভুইয়া ম্যাডামের সাহসী উদ্যোগের প্রতি আন্তরিক সংহতি জানাচ্ছি এবং প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছিÑ যাতে দ্রুততম সময়ে দায়ীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়।
তারা বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, নারীর প্রতি সম্মান, নিরাপত্তা ও ন্যায্যতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যেক শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং নাগরিককে সাইবার সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে এগিয়ে আসতে হবে।
আমরা সকল নারী শিক্ষকবৃন্দ ঐক্যবদ্ধভাবে সাইবার বুলিং, যৌন হয়রানি ও ডিজিটাল নির্যাতনের যেকোনো রূপের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিচ্ছি।
বিবৃতিদাতা বাংলাদেশের বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষকবৃন্দের মধ্যে রয়েছে, ড. সাবিহা সুলতানা, ড. মুহসিনা আক্তার, ড. শারমিন ইসলাম, রেহানা সুলতানা, মারদিয়া মমতাজ, মোছা. সালেহা আক্তার, ড. আফরোজা বুলবুল, নাজনীন বিনতে হক, আসমা আক্তার, নুরুন নাহার আঁখি, তানিয়া বিনতে ফাইজ, ড. হাসিনা বেগম এবং রওনক জাহান।