দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় গ্রেপ্তার জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল বারকাতকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মো. জাকির হোসেন গতকাল বুধবার এই আদেশ দেন।

এর আগে আবুল বারকাতকে আদালতে হাজির করে তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে দুদক। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত তার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এর আগে ১১ জুলাই আবুল বারকাতকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করা হয়। সে সময় তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। তার আগের দিন তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

অধ্যাপক আবুল বারকাত জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে এননটেক্স গ্রুপের নামে ২৯৭ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত ২০ ফেব্রুয়ারি তিনিসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দুদক বলছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও আবুল বারকাত পরস্পর যোগসাজশে জালজালিয়াতির মাধ্যমে এননটেক্স গ্রুপের ২২টি প্রতিষ্ঠানকে ২৯৭ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছিলেন। আতিউর রহমান ও তার সহযোগী অন্য ব্যক্তিরা বিভিন্ন অনৈতিক কৌশলে এই অর্থ আত্মসাৎ করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে।

আবুল বারকাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ছিলেন। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

ব্যাংক বোর্ডের সহায়তায় অর্থপাচার নজিরবিহীন: শুনানিতে আদালত

জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাতের জামিন শুনানিতে আদালত বলেছে, ব্যাংকের বোর্ডের সহায়তায় বিদেশে অর্থপাচার হয়েছে, যা নজিরবিহীন। গতকাল ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ মন্তব্য করেন। এদিন সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আবুল বারকাতকে মহানগর দায়রা জজ আদালতের হাজতখানায় নেওয়া হয়। ১১টা ৭ মিনিটে তোলা হয় আদালতে। কাঠগড়ায় একটি বেঞ্চে বসেন তিনি, তখন তাকে বেশ চিন্তিত দেখা যায়। ঋণ জালিয়াতির মামলায় তার জামিন চেয়ে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী শাহিনুর ইসলাম।

শুনানীর পরে বিচারক বলেন, সোনালী ব্যাংকের পাঁচ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি নিয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছিলেন, পাঁচ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকায় না। এরপর থেকেই পাঁচ হাজার, দশ হাজার কোটি, বিশ হাজার কোটি, পঞ্চাশ হাজার, এক লাখ কোটি টাকা লোপাট হতে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। এসব টাকা পাচার হয়ে চলে যায় বিভিন্ন দেশে। বিগত ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় ট্রুথ কমিশন গঠন করা হয়েছিল। যারা দুর্নীতি করেছিল, তারা ওই কমিশনে গিয়ে নিজেদের দুর্নীতির কথা স্বীকার করে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পদ রাষ্ট্রের অনুকূলে জমা দেয়। ভেবেছিলাম এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়েও এমন কিছু উদ্যাগ নেয়া হবে। পাচার করা টাকা এই সরকার ফেরত এনে রাষ্ট্রের কাছে জমা দিবে, কিন্তু সেটি হয়নি।

বিচারক গালিব বলেন, এখন দুদকের মতো সংস্থার পক্ষে এতো এতো দুর্নীতি বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা সম্ভব না। এছাড়া দুদক যেসব মামলা করে, সেসব মামলায় শাস্তিও হয় কম। দুর্নীতি করে পাঁচ হাজার কোটি টাকার; শাস্তি হয় পাঁচ বছরের।

এরপর আবুল বারকাত ও দুদকের কৌঁসুলিকে উদ্দেশ্য করে বিচারক বলেন, জনতা ব্যাংকের অ্যালিগেশন আরও অনেক বড় থাকার কথা। তবে সব অ্যালিগেশনের সঙ্গেই আপনি জড়িত- এটি আমি বলছি না। আপনি ধৈর্য ধরেন। ব্যাংকের বোর্ডের সহায়তায় বিদেশে অর্থপাচার করছে- এটা নজিরবিহীন। আমাদের দেশের অর্থনীতির মেরুদ- ভেঙে দিয়েছে।