আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশসহ বিভিন্ন ডিসিপ্লিনারি ফোর্সের (আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী) বিচারের জন্যই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন-১৯৭৩ বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এ আইনে যেসব অপরাধের বিচার করা হচ্ছে, সেসবের বর্ণনা বাংলাদেশের সাধারণ কোনো আইনে নেই। এমনকি সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী বা বিমানবাহিনীর নিজস্ব আইনেও নেই। এটি একটি বিশেষ আইন। এই অপরাধগুলো আন্তর্জাতিক আইনে বর্ণিত অপরাধ। সুতরাং এসব অপরাধের বিচার কেবল এই আইনের আওতায় করতে হবে।

গতকাল রোববার ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে গুমের মামলায় সামরিক কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আইন সবসময় আইনের গতিতেই চলবে। যখন আদালত থেকে কোনো গ্রেপ্তারি বা অন্য কোনো পরোয়ানা জারি হবে, তখন একজন আসামীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে উপস্থিত করতে হবে। এটা সংবিধান, ট্রাইব্যুনাল ও ফৌজদারি কার্যবিধিতেও রয়েছে। অর্থাৎ একজন আসামীকে গ্রেপ্তার করা হলে, যেখানেই গ্রেপ্তার করা হোক না কেন, তাকে আদালতে আনার সময়ে যতটুকু সময় ব্যয় হবে, তা ছাড়া ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের সামনে উপস্থিত করতে হবে। এটাই হচ্ছে আইনের বিধান। শুধু আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন নয়, সংবিধানও স্বীকৃতি দিয়েছে যে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার বেশি কাউকে আটক রাখা যায় না।

তিনি বলেন, আদালত যদি কাউকে ক্ষমতা দেয়, তাহলে আটক রাখতে পারে। সুতরাং যাকে যখনই গ্রেপ্তার করা হবে, তাকে তখনই আদালতের কাছে আনতে হবে। আদালত যদি তাকে আটক রাখতে বলেন, আটক রাখা হবে। আদালত যদি তাকে ছেড়ে দিতে বলেন, সেটাও দিতে পারেন। সুতরাং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা তখন আদালতের হাতে চলে যায়। এটাই হচ্ছে আইনি ব্যাখ্যা। তাই এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে কেউ এ বিষয়ে আইনি ব্যাখ্যা চাননি। যদি কেউ চান, নিশ্চয়ই আইনি ব্যাখ্যা জানাব।

হেফাজতে নেওয়া ১৫ সেনা কর্মকর্তার স্ট্যাটাস কী হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমাদের কাছে যেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ বলেনি যে তাদের আটক রাখা হয়েছে, তাই মিডিয়াতে যা এসেছে, সেটিকে আমরা আমলে নিচ্ছি না। আমাদের যদি বলা হয় যে তাদের আটক রাখা হয়েছে, তাহলে অবশ্যই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতের কাছে আনতে হবে এটাই বিধান। যেহেতু আমরা জানি না, সুতরাং এ বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

তিনি বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার বিচার নিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই আইন তৈরি করা হয়েছে। এসব আইন সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ বা বিধানের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও প্রাধান্য পাবে। অর্থাৎ সংবিধান নিজেই বলে দিচ্ছে যে সংবিধানের চেয়েও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন শক্তিশালী। এটি সংবিধানের মাধ্যমেই স্বীকৃত। তাই এই আইনের কোনো বিধানকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। এই আইনের কোনো বিধানকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে রিটও করা যাবে না। এটি সব আইনের ওপর প্রাধান্য পাবে। সুতরাং এই আইনের বিধানে যে বিচারের প্রক্রিয়া রয়েছে, তার মধ্য দিয়েই সবাইকে চলতে হবে- এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা : ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সরাসরি সম্প্রচারের সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা হয়েছে।

এ বিষয়ে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছিল। ঠিক সেই সময় আমাদের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা পেজটি সাময়িকভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেয়, যদিও পরে তা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, যুক্তিতর্কে বহু তথ্যপ্রমাণসহ নিষ্ঠুরতার বিবরণ রয়েছে, যা গোটা বিশ্ববাসীর জানা অপরাধীরা চায় না। তাদের সহযোগীরাও তা চায় না। এ কারণেই আমাদের ফেসবুক পেজে সাইবার হামলা চালানো হয়েছে।

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু হয়েছে। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গতকাল আইনি দিক ও বিগত ফ্যাসিস্ট শাসন আমলের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন।