জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মামলায় রাজসাক্ষী হিসেবে জেরা দিচ্ছেন এসআই শেখ আবজালুল হক।

তার জেরাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ প্রসিকিউশন ও স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীদের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাখানেক তর্কাতর্কি হয়।

ট্রাইব্যুনাল-২-এর দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলের নেতৃত্বে ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছি, আর অন্য সদস্য ছিলেন জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এদিন বেলা সাড়ে ১০টার দিকে শুরু হয় রাজসাক্ষী আবজালুলের জেরা। আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুর রহমান প্রশ্ন করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট থানায় কোনো পুলিশ মারা গেছেন কি না। রাজসাক্ষী জবাবে বলেন, না, তবে একজন মারা গেছেন—তিনি অন্য ইউনিটে ছিলেন, যার তদন্তে তিনি জড়িত ছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি।

প্রসিকিউশন এ ধরনের প্রশ্নের বিরুদ্ধে আপত্তি জানালে দুই পক্ষের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাখানেক তর্ক হয়। পরে ট্রাইব্যুনালের হস্তক্ষেপে তা থামানো হয়।

এর আগে গতকাল বুধবার আবজালুল ২৩ নম্বর সাক্ষী হিসেবে প্রথমবার মুখ খুলেছিলেন। ট্রাইব্যুনালে দেওয়া তার জবানবন্দিতে অনেক তথ্য প্রকাশ না হলেও প্রসিকিউশন দাবি করেন, রাজসাক্ষী হিসেবে তিনি নিজের জানা সব তথ্য দিয়েছেন।

এদিন বেলা ১১টায় ডায়াসে উঠে পরিচয় দিয়ে জেরা শুরু করেন আবজালুল। প্রায় ৫০ মিনিটের মধ্যে তার জবানবন্দি শেষ হয়। তিনি জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট থানার সামনে লাশ পোড়ানোর ঘটনাটি নিজ চোখে দেখেননি। অস্ত্র-গুলি জমা দেওয়ার সময় ১৫ আগস্ট অন্যদের মুখে শুনেছেন। লাশ পোড়ানোর কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন ওসি সায়েদ ও এএসআই বিশ্বজিৎ। এরপর তিনি ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।

চলতি বছরের ২১ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলায় ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন। সেই সময় উপস্থিত আট আসামির সাতজনই নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। তবে এসআই শেখ আবজালুল হক দোষ স্বীকার করে রাজসাক্ষী হওয়ার অনুমতি পান।

গত ১৮ নভেম্বর ও ১২ নভেম্বর রাজসাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ নির্ধারিত থাকলেও বিশেষ কারণে হয়নি। এর আগে ৫ নভেম্বর প্রত্যক্ষদর্শী শাহরিয়ার হোসেন সজিব সাক্ষ্য দেন। এছাড়া ৩০ অক্টোবর গুলিবিদ্ধ ভুক্তভোগী সানি মৃধা, ২৯ অক্টোবর আশুলিয়া থানার এসআই মো. আশরাফুল হাসান সাক্ষ্য দেন।

মামলায় গ্রেপ্তার আসামি আটজন—সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, সাবেক অতিরিক্ত সুপার মো. শাহিদুল ইসলাম, পরিদর্শক আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক, এসআই আরাফাত উদ্দিন, এএসআই কামরুল হাসান, শেখ আবজালুল হক ও কনস্টেবল মুকুল। সাবেক এমপি সাইফুলসহ বাকিরা এখনও পলাতক।

গত বছরের ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে ছয় তরুণ নিহত হন এবং তাদের লাশ ভ্যানে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। একজন জীবিত থাকলেও তাকে বাঁচানো হয়নি। এই ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়।