বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়ায় থাকা চারটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছে আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তার ৪ লাখ ৩০ হাজার ডলারের আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্পেস জব্দের আদেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন বলে দুদকের সংস্থার সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মো. তানজির আহমেদ তথ্য দিয়েছেন।
সাবেক আইজিপি বেনজীরের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ চেয়ে দুদকের উপপরিচালক মো. হাফিজুল ইসলামের করা আবেদনে বলা হয়, তার মালিকানাধীন এবং প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্কিত স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন তিনি। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে বেনজীরের স্থাবর সম্পদ জব্দ ও অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করা প্রয়োজন বলে মনে করছে দুদক। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে আগে থেকেই লোকমুখে আলোচনা ছিল। তবে ২০২৪ সালের মার্চে সংবাদপত্রে তার সম্পদ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
আবেদন অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাফেলো লেক এভিনিউ এর আবাসিক বাড়ি ও হামবার্গের লেক স্ট্রিটের একটি বাণিজ্যিক ভবন ক্রোকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যার মূল্য ৪ লাখ ৩০ হাজার ইউএস ডলার। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের দুইটি ও মালয়েশিয়ার সি আই এম বি ইসলামী ব্যাংকের দুইটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক হিসেবে কি পরিমান অর্থ রয়েছে তা দুদকের আবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
দুদক কয়েক দফা তলব করলেও বেনজীর জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হতে যাননি। গত বছর সরকার পতনের পরপরই বিমানবন্দর দিয়ে তার দেশের বাইরে চলে যাওয়ার একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় আসে। বেনজীর এবং তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের বিরুদ্ধে ৭৪ কোটি টাকার ‘অবৈধ’ সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগে ১৫ ডিসেম্বর পৃথক চারটি মামলা করে দুদক। বেনজীর আহমেদ ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে করা মামলায় বলা হয়, বেনজীর ৯ কোটি ৪৪ লাখ টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ২ কোটি ৬২ লাখ টাকা সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন। তার স্ত্রী জীশান মীর্জা ৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন এবং ১৬ কোটি ১ লাখ টাকার তথ্য গোপন করেছেন। তাদের বড় মেয়ে ফারহীন রিশতা বিনতে বেনজীর ৮ কোটি ৭৫ লাখ টাকার এবং মেজ মেয়ে তাহসীন রাইসা বিনতে বেনজীর ৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বেনজীর ও তার স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা করে দুদক। তাদের বিরুদ্ধে ১১ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ করা হয়েছে এজাহারে।
সাবেক এই পুলিশ প্রধানকে ধরতে এপ্রিলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল পুলিশ অর্গানাইজেশনের (ইন্টারপোল) মাধ্যমে ‘রেড নোটিস’ জারি করা হয়। এরপর মে মাসে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) বেনজীর আহমেদের স্ত্রী জীশান মির্জার নামে থাকা দুবাইয়ের দুইটি ফ্ল্যাট জব্দ এবং দুইটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দেয়। একই মাসে তার মেয়ে তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে দুবাইয়ে থাকা একটি ফ্ল্যাট জব্দ ও দুটি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ আসে।
বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীরসহ তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সাউথইস্ট ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আলমগীর কবিরসহ তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে আদালত। দুদকের পৃথক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার এ আদেশ দেন ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব। নিষেধাজ্ঞায় পড়া দুই ব্যক্তি হলেন- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক রেয়াত ও প্রত্যর্পণ পরিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এবং তার স্ত্রী খোদেজা খাতুন।
দুদকের সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) তানজির আহমেদ জানান, আলমগীর কবিরের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক আজিজুল হক। আর তাজুল ইসলাম দম্পতির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করেন দুদকের উপসহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান।
আলমগীর কবিরের বিরুদ্ধে করা আবেদনে বলা হয়, তিনি ও তার ছেলে রায়হান কবিরের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাউথইস্ট ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। দুদক জেনেছে, আলমগীর কবির দেশ ছেড়ে পালাতে পারেন। এ কারণে তার বিদেশ গমন ঠেকানো প্রয়োজন।
তাজুল দম্পতির বিরুদ্ধে করা আবেদনে বলা হয়, তাজুলের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের অনুসন্ধান চলছে। তারা বিদেশ পালিয়ে গেলে অনুসন্ধান কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দরকার।