গাজীপুরের আলোচিত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত আরও এক আসামি গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। সোমবার দিবাগত মধ্যরাতে ঢাকার উত্তরা এলাকা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয় মামলার ওয়ান্টেড আসামি মো. আরমান হোসেনকে (২২)। এ নিয়ে এই মামলায় মোট ৮ জন আসামি গ্রেপ্তার হলো। এছাড়া কিশোরগঞ্জ থেকে রেবের হাতে গ্রেফতারকৃত শহিদুল ইসলাম কে হানিট্যাবের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ওসি শাহিন খান জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রেপ্তার অভিযান চালানো হয়। সিসিটিভি ফুটেজে নীল শার্ট পরিহিত অবস্থায় ধরা পড়া ওই আসামিকে মামলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসামি হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
স্ত্রীর আবেগঘন লিখিত বক্তব্যঃ মঙ্গলবার গাজীপুর প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিহত তুহিনের স্ত্রী মুক্তা বেগম সাংবাদিকদের হাতে একটি লিখিত বক্তব্য তুলে দেন। বক্তব্যে তিনি সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন “প্রয়াত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এবং সিসিটিভি ফুটেজসহ সকল তথ্য যেভাবে আপনারা সামনে এনেছেন, আমি ও আমার পরিবার আজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আপনাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের কারণেই আমার স্বামীর হত্যাকারীদের অপরাধ প্রকাশ হয়েছে। না হলে এটি হয়তো সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মতো প্রমাণ হারিয়ে যেত। আজ আপনারা পাশে আছেন বলেই আমি এখনও কিছুটা শক্ত আছি।”
তিনি আরও অভিযোগ করেন, “এই হত্যাকাণ্ড পরিকল্পিত ছিল। ভাড়াটিয়া কিলার ভাড়া করে আমার স্বামীকে হত্যা করা হয়েছে। এর পেছনে যারা টাকা দিয়ে ইন্ধন জুগিয়েছে, তাদেরও দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।”
পরিবারের সাত দফা দাবি লিখিত বক্তব্যে মুক্তা বেগম সাংবাদিকদের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ৭ দফা দাবি জানান তাদের দাবিগুলো হলো- সাংবাদিক তুহিন হত্যার সঙ্গে জড়িত সকল আসামিকে দ্রুত গ্রেপ্তার।
১৫ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল।
মামলার বাদী, স্বাক্ষী, পরিবার ও প্রতিদিনের কাগজ সম্পাদকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
মামলা ৯০ দিনের মধ্যে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর ও সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর।
বিচার প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত খুনিদের কারাগারে রাখা।
তুহিন দেশের জন্য কাজ করেছেন তাঁর পরিবার ও সন্তানের দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
সাংবাদিকদের জন্য সারাদেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আলাদা হটলাইন চালু।
তিনি আরও জানান, পরিবারের পক্ষ থেকে মাননীয় আইন উপদেষ্টা, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও পুলিশ প্রধানের সঙ্গে জরুরি সাক্ষাৎ করার ইচ্ছা রয়েছে।
জিএমপি কমিশনারের মানবিক উদ্যোগঃ
মঙ্গলবার বিকেলে জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান নিহত তুহিনের পরিবারের হাতে নগদ সহায়তা প্রদান করেন এবং সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন “তুহিন হত্যাকাণ্ড আমাদের গভীরভাবে ব্যথিত করেছে। অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করব।”
গত ৭ আগস্ট রাত ৮টার দিকে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা ঈদগাহ মসজিদ মার্কেটের সামনে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয় প্রতিদিনের কাগজ এর স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিনকে। এরপর থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামিসহ ৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।