সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় আইনজীবীদের মারধর ও হত্যাচেষ্টার মামলায় আওয়ামী লীগ সমর্থক ৭০ জন আইনজীবীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। আর ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগর ও ৯ জন নারী আইনজীবীকে জামিন দেওয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জাকির হোসেন গতকাল রোববার এ আদেশ দেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ও বাদীপক্ষের আইনজীবী খোরশেদ আলম মিয়া।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ সমর্থক ৮০ জন আইনজীবী আজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আসামিপক্ষ থেকে বলা হয়, তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। জামিন দিলে পলাতক হবেন না। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জামিন আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। আসামিদের জামিন আবেদন নাকচ করে ৭০ জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত। অন্যদিকে জামিন পেয়েছেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আবু সাঈদ সাগর ও ৯ জন নারী আইনজীবী। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যদের হামলা, আইনজীবীদের চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে আওয়ামী লীগপন্থী ১৪৪ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে ১১৫ জন আইনজীবী উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নেন। জামিনের মেয়াদ শেষ হবে আজ সোমবার।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে চলাকালে ৪ আগস্ট আদালত প্রাঙ্গণে আইনজীবীদের ওপর হামলা, চেম্বার ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আওয়ামী লীগপন্থি ১৪৪ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন আইনজীবী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলী বাবু। আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড করে অভিযোগটি কোতোয়ালি থানায় এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার আদেশ দেন। মামলা দায়েরের এ ঘটনায় হাইকোর্ট থেকে ৮ সপ্তাহের আগাম জামিন নেন ১১৫ জন। ৭ এপ্রিল তাদের জামিনের মেয়াদ শেষ হবে। এ মামলার অন্যতম আসামিরা হলেন- আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, ঢাকা মহানগর আদালতের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আব্দুল্লাহ আবু, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বাদল, মো. সাইদুর রহমান মানিক, মো. মিজানুর রহমান মামুন, আব্দুর রহমান হাওলাদার, গাজী মো. শাহ আলম, আব্দুল বাতেন, মাহবুবুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক খন্দকার গোলাম কিবরিয়া জুবায়ের, মোহাম্মদ আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন, মো. ফিরোজুর রহমান মন্টু, মো. আসাদুজ্জামান খান রচি ও সাবেক সংসদ সদস্য সানজিদা খানম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ৪ আগস্ট দুপুরে আসামিরা ঢাকা আইনজীবী সমিতির সম্মুখ থেকে বেআইনি জনতাবদ্ধে আবদ্ধ হয়ে অস্ত্র, লাঠিসোঁটা নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন। তারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ‘শেখ হাসিনার ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় ভুক্তভোগী আইনজীবী মামলা শুনানি শেষে করে ঢাকা আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে আসেন। তখন আসামি আনোয়ার শাহাদাৎ শাওন হেলমেট পরে হত্যার উদ্দেশ্যে তার দিকে গুলী তাক করেন।