পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের করা পৃথক তিন মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, আজমিনা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকদের বিরুদ্ধে আরও ২২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। ঢাকার চার নম্বর বিশেষ জজ মো. রবিউল আলম গতকাল রোববার সাক্ষীদের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
সাক্ষীরা হলেন-ঢাকার অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইন, ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সেফাতুল্লাহ ও আরেক মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুজ্জামান, সোনালী ব্যাংকের অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. মনির হোসেন, রাজউকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও শাখা প্রধান লায়লা নূর বিশ্বাস, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পরিচালক মো. আল মামুন মিয়া, রাজউকের সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম অপারেটর মো. জাকির হোসাইন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মো. জহিরুল ইসলাম খান, রাজউকের উপসচিব তানজিলুর রহমান, দুদকের কনস্টেবল আজহারুল ইসলাম, ঢাকার সাব রেজিস্ট্রার মাহবুবুর রহমান ও গাজীপুরের সাব রেজিস্ট্রার সোহেল রানা।
দুদকের প্রসিকিউটর মীর আহমেদ আলী সালাম বলেন, তিন মামলায় মোট ২২ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছে। এর মধ্যে রেহানা যে মামলায় প্রধান আসামি ওই মামলায় আটজন, টিউলিপের মামলায় সাতজন এবং ববির মামলায় সাতজন সাক্ষ্য দিয়েছে। তিনি বলেন, এসব মামলার আসামিদের মধ্যে একমাত্র রাজউকের সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম কারাগারে আছেন। তার পক্ষে তিন মামলার বাদীকে জেরা করার আবেদন করা হয়। আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন।
আদালত রেহানার মামলার পরবর্তী দিন ১৬ নভেম্বর, টিউলিপের মামলা ২৩ নভেম্বর ও ববির মামলা ২৫ নভেম্বর ধার্য করা হয়েছে। ওইদিন বাদীদের জেরা করবেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। পাশাপাশি মামলার তদন্ত কর্মকর্তাদের সাক্ষ্যগ্রহণও হবে বলেও প্রসিকিউটর বলেছেন। এদিন শুনানিকালে খুরশীদ আলমকে আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষে আইনজীবী শাহীনুর রহমান জামিন চেয়ে শুনানি করেন। তবে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে আদেশ দেয়।
প্লট বরাদ্দের তিন মামলায় গেল ২৯ অক্টোবর আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন খুরশীদ আলম। আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেয়। গেল ২ নভেম্বর এই তিন মামলায়ও তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
গত ৩১ জুলাই এই তিন মামলাসহ ছয় মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত। এরপর ১৩ অগাস্ট তিন মামলার তিন বাদী, ২৮ অগাস্ট তিনজন করে ৯ জন, ৪ সেপ্টেম্বর পাঁচজন করে ১৫ জন, ২১ সেপ্টেম্বর ৯ জন, ৬ অক্টোবর ৯ জন এবং ১৬ অক্টোবর ৯ জন এবং ২ নভেম্বর আরো ৬ জন সাক্ষ্য দেন।
শেখ পরিবার ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মো. নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য মেজর (ইঞ্জিনিয়ার) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দে ‘দুর্নীতির’ অভিযোগে গত জানুয়ারিতে পৃথক ছয়টি মামলা করে দুদক। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ (পুতুল), বোন শেখ রেহানা, রেহানার মেয়ে ও ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ও অপর মেয়ে আজমিনা সিদ্দিককে আসামি করা হয়। সবগুলো মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে জারি রয়েছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ।
মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। তারা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ৬টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।