তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশ প্রশাসনে নানা অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরেছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ট্রাইব্যুনালে তিনি জানান, পুলিশের সর্বোচ্চ পদে থাকলেও তাকে সব বৈঠকের ব্যাপারে জানানো হতো না। বৈঠকের বিষয়ে জানতে তাকে নির্ভর করতে হতো সোর্সের ওপর। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় রাত্রীকালীন এসব বৈঠক হতো। আমার অধস্তন যেসব অফিসার ওইসব বৈঠকে অংশগ্রহণ করতেন, তাদের আমি নিবৃত করার চেষ্টা করেছি, তারা আমাকে মানেনি। আমি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিইনি কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বেই এসব বৈঠক হতো। তবে অনিয়ম জানার পরেও আমি পদত্যাগ করার চেষ্টা করিনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেলে রাজসাক্ষী হিসেবে জেরায় মামুন এসব তথ্য দেন। ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে এ মামলায় মামুনও আসামি ছিলেন। কিন্তু পরে রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে মামলার বিচারে সহায়তা করেন তিনি।

গতকাল রাজসাক্ষীকে আসামি পক্ষের জেরা শেষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ এই মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৮ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেছেন। এর আগে এই মামলার ৩৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হয়েছে।

ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। এসময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

জেরায় আইজিপি মামুন জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় রাত্রীকালীন এসব বৈঠক তিনি আইজিপি থাকার সময় হতো, আগেও হতো। এসব বৈঠকে তৎকালীন আইজিিপ মামুন অংশগ্রহণ করতেন না। পুলিশের সর্বোচ্চ পদে আসীন থাকলেও তাকে এসব বৈঠকের ব্যাপারে জানানোও হতো না। এ বিষয়ে জানতে তাকে সোর্সের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।

মামুন বলেন, আমার অধস্তন যেসব অফিসার ওইসব বৈঠকে অংশগ্রহণ করতেন, তাদের আমি নিবৃত করার চেষ্টা করেছি, তারা আমাকে মানেনি। আমি তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিইনি কারণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বেই এসব বৈঠক হতো। তবে অনিয়ম জানার পরেও আমি পদত্যাগ করার চেষ্টা করিনি। এটা সত্য নয় যে, আমি সুবিধাভোগী ছিলাম বলে পদত্যাগ করিনি।

জেরায় চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, র‌্যাবের উত্তরা ইউনিটের কম্পাউন্ডে টাস্কফোর্স ইন্টিলিজেন্স সেলের বন্দিশালা র‌্যাব কর্তৃক পরিচালিত হতো। ওই বন্দিশালাগুলো আমার নির্দেশে তৈরি বা সেখানে আমার নির্দেশে মানুষজনকে আটক রাখা হতো এটা সত্য নয়। ব্যারিস্টার আরমানকে আমার নির্দেশে বন্দি করা হয়েছিল-এটা সত্য নয়।

পুলিশের সাবেক আইজিপি মামুন আরও বলেন, অন্যায়-অনিয়মের মাধ্যমে আমি সুবিধাভোগ করেছি একথা সত্য নয়। আমি ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে বিধিবিধান অনুযায়ী আমার অধস্তন পুলিশ অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করেছি। আইজিপির সঙ্গে ডিআইজিদের যেসব বৈঠক হতো তাতে ডিআইজিদের মতামত দেওয়ার সুযোগ ছিল। ট্রাইব্যুনালে মামুন উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালে তৎকালীন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতে ৫০ শতাংশ ব্যালট বাক্স ভরে রাখার পরামর্শ দেন, তা আমি সোর্স থেকে জানতে পারি। ২০১৮ সালে নির্বাচনে অনিয়মের কথা জানতে পেরে আমি অধস্তন কর্মকর্তাদের বিরত থাকতে বলেছি; কেউ আমার কথা শুনেছে, কেউ শোনেনি।